এ ধরনের সংবাদ দেশে এবং দেশের বাইরে চলমান তদন্ত কার্যে বিঘ সৃষ্টি করতে পারে এবং চুরিকৃত অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে হ্যাকিং এর মাধ্যমে অর্থ চুরির বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ চক্রের অপরাধ হিসেবে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন পক্ষের তদন্তে পরিলক্ষিত হয়েছে এবং এ অপরাধের সাথে তাদের অপরাধ প্রমানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের বিভ্রান্তি পরিহারের লক্ষে রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারের সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়টি সকলের জ্ঞাতার্থে দেয়া হলোঃ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব হতে সাইবার হ্যাকিং এর মাধ্যমে পাচারকৃত ৮১ মিলিয়ন ইউ.এস ডলার এর মধ্যে মাঃডঃ ৪.৬৩ মিলিয়ন এবং ফিলিপিনো পেসো ৪৮৮.২৮ মিলিয়ন (সর্বমোট আনুমানিক মাঃ ডঃ ১৪.৫৪ মিলিয়ন) ফিলিপাইন আদালতের আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে ১০ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখ ফেরত প্রদান করা হয়েছে। এ অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় ফিলিপাইন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ প্রয়োজনীয় আইনী সহযোগিতাসহ সকল ধরণের সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পারস্পরিক আইনগত সহায়তা অনুরোধের (Mutual Legal Assistance Request) সূত্রে ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিজ বর্তমানে বাংলাদেশকে সকল ধরণের আইনী সহায়তা প্রদান এবং ফিলিপাইনের আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে সরকারী আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থ ফেরতে সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়া ফিলিপাইনের Rizal Commercial Banking Corporation (RCBC) বাংলাদেশ ব্যাংককে ০.০৭ মিলিয়ন মাঃডঃ হ্যাকিং এর অব্যবহিত পরে ফেব্রুয়ারী,২০১৬ মাসেই ফেরত প্রদান করে।
হ্যাকিং এর মাধ্যমে চুরিকৃত অর্থের অবশিষ্ট অংশ দ্রুত উদ্ধার এবং তা ফেরত আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইনী কার্যক্রম বর্তমানে ফিলিপাইনে চলমান রয়েছে।
(ক) Solaire নামক ক্যাসিনোতে যে মাঃডঃ ২৯ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরিত হয় তা ফিলিপাইনের আদালত কর্তৃক ফ্রিজ করা হয় এবং এ বিষয়টি বর্তমানে ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
(খ) ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং এর দুইজন কর্মচারীর হিসাবে ১.২ মিলিয়ন ডলার সমপরিমান অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং ফিলিপাইনের আদালত কর্তৃক Asset Preservation Order জারী করা হয়েছে অর্থাৎ এ অর্থ আদালতের আদেশ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট হিসাব হতে কোন পক্ষই উত্তোলন করতে পারবে না। এ পরিমান অর্থ বাজেয়াপ্তকরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত প্রদানের বিষয়টি ম্যানিলার রিজিওনাল কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
(গ) মানি রেমিটেন্স কোম্পানী চযরষৎবস এর নিকট ১৭ মিলিয়ন ডলার রক্ষিত রয়েছে মর্মে বিভিন্ন পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে পরিলক্ষিত হয়েছে। এ পরিমান অর্থ Philrem এর নিকট হতে উদ্ধারের জন্য ফিলিপাইনের Anti Money Laundering Council (AMLC) কর্তৃক সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে Philrem ও এর স্বত্বাধিকারীদের সম্ভাব্য বাজেয়াপ্তকরণযোগ্য স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ AMLC কর্তৃক নিরূপন করা হয়েছে।
(ঘ) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব হতে অর্থ চুরির বিষয়ে Rizal Commercial Banking Corporation (RCBC) এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং এক্ষেত্রে ব্যাংকের দায় রয়েছে। সাইবার হ্যাকিং এর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থের অবশিষ্ট ৬৬.৪ মিলিয়ন ডলার আইনী প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতের আদেশের মাধ্যমে বর্ণিত উৎসসমূহ হতে উদ্ধারের পর যে পরিমান অর্থ অনাদায়ী থাকবে তা RCBC ব্যাংক এর নিকট হতে আদায়ের আইনী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
ফিলিপাইনের আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণের মাধ্যমে আদালতের চূড়ান্ত আদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে বর্ণিত অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ফিলিপাইন সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আইনী প্রক্রিয়ায় এ অর্থ দ্রুত ফেরত পাওয়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যা চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, সাইবার হ্যাকিং এর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থের অবশিষ্ট অংশ দ্রুত উদ্ধার ও তা ফেরত আনা এবং তদন্ত কার্যক্রমসহ বিভিন্ন আইনগত বিষয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথেও নিয়মিত আলোচনা চলছে। সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সুইফট এর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সভার সূত্রে একটি ত্রিপক্ষীয় স্টেটমেন্ট জারী করা হয়েছে যাতে বাংলাদেশের চুরিকৃত অর্থ উদ্ধার এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে হ্যাকিং এর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক, এপিজি, এগমন্ট গ্রুপ, Interpol সহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন পক্ষের তদন্ত ও ১৪.৫৪ মিলিয়ন ডলার ফেরত প্রদানে ফিলিপাইনের আদালতের আদেশে সাইবার হ্যাকিং এর মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, চীন, শ্রীলংকাসহ বাংলাদেশে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সাথে বিভিন্ন পক্ষের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের তদন্তকারী সংস্থার তদন্তাধীন রয়েছে এবং এক্ষেত্রে আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ (Transnational Organized Crime) এর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও বাংলাদেশে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হলেই শুধুমাত্র অপরাধী সনাক্তকরণসহ সকল তথ্য যথাসময়ে প্রকাশযোগ্য হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস কর্তৃক ফিলিপাইনের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে হ্যাকিং এর মাধ্যমে অর্থ পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস দায়ের করা হয়েছে।
ফিলিপাইনের সিনেট অধিবেশনে জঈইঈ ব্যাংক এর তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন যে, যদি RCBC ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির কেসে কোনভাবে দায়ী হয় তবে RCBC ব্যাংক ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। ইতোমধ্যে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট হিসাবসমূহের লেনদেনে বিভিন্ন গুরুতর অনিয়ম পাওয়ায় RCBC ব্যাংক এর বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ জরিমানা (১ বিলিয়ন পেসো বা আনুমানিক ২১ মিলিয়ন ইউএস ডলার) আরোপ করেছে। এ হতে জঈইঈ ব্যাংক এর রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা এবং গুরুতর অনিয়ম সংঘটন সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবীকে আরও সুস্পষ্ট করে।
৩ আগস্ট, ২০১৭ তারিখ ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক রিপোর্ট হতে দেখা যায় যে, চীনের পুলিশ বিভাগ কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট মূল দুই (২) জন সন্দেহভাজন Ding Zhize Gao Shuhua -কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৬:৪৩ ৪১৯ বার পঠিত