একুশে জুলাই: কিছু কথা মনে না রাখাই ভালো

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » একুশে জুলাই: কিছু কথা মনে না রাখাই ভালো
শুক্রবার, ২০ জুলাই ২০১৮



---একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতির জন্য তৈরি করা তোরণে দেখলাম, শহিদদের তালিকায় নাম রয়েছে ‘বন্দন দাস’৷ যতদূর মনে পড়ে, ১৯৯৩ সালের ওই ভয়ংকর দিনে যাঁরা শহিদ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাঁধন দাস৷ হয়তো ক্ষমতার মেদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহিদের নামও পালটে গিয়েছে৷
নিখিলেশ রায়চৌধুরী

শহিদদের নিয়ে রাজনীতি নতুন কিছু নয়৷ এক সময় পশ্চিমবঙ্গে বামেরাও এই রাজনীতিতে অভ্যস্ত ছিল৷ দীর্ঘদিন তারা পুলিশের গুলিতে নিহত কমিউনিস্ট পঞ্চকন্যাকে নিয়ে রাজনীতি করেছে৷ এখনও বোধহয় বউবাজারের মোড়ে লতিকা, প্রতিভা, অমিয়াদেবীদের স্মরণে তৈরি করা সেই ছোট্ট স্মৃতিসৌধটা রয়েছে৷ যদিও, বাম আমলে কখনই সেই স্মৃতিসৌধে আমি কাউকে মালা দিতে দেখিনি৷

পরবর্তীকালে বাহাত্তর থেকে সাতাত্তরের ‘কংগ্রেসি সন্ত্রাস’ নিয়ে সিপিএম বিশাল প্রচার চালাত৷ তারা ১১০০ শহিদের একটা তালিকা দিত৷ যদিও, জ্যোতিবাবু ক্ষমতায় আসার পর কমিশন গঠিত হওয়া সত্ত্বেও সিপিএমের পক্ষ থেকে কোনও নামধাম জমা পড়েনি৷ বিরক্ত হয়ে বিচারপতি কমিশনের কাজ স্থগিত করে দেন৷

আসলে তরুণ প্রজন্মকে সবসময়ই কিছু না কিছু বটিকা খাওয়ানো হয়৷ পলিটিক্যাল বটিকা৷ তাদের সামনে এমন কিছু আইকন গরমাগরম বুলি ঝাড়েন, যারা ব্যক্তিগত জীবনযাপনে অতিশয় নীচ৷ কিন্তু, তাদের কথা শুনেই তরুণ প্রজন্ম কোনও কোনও অ্যাডভেঞ্চারে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ তারপর নিঃশেষ হয়ে যায়৷ সবার মা-বাবার তো আর সেই পয়সা থাকে না যে, তারা বিপত্তিতে পড়লে বিদেশে পাঠিয়ে দেবেন৷ নকশাল আমলে যেমন হত৷ অনেক প্রতিভাসম্পন্ন তরুণ রেডবুকে আকৃষ্ট হয়ে পুলিশের গুপ্তচর সন্দেহে সাধারণ ফেরিওয়ালাকেও খুন করেছে৷ পরিণামে কেউ পুলিশের গুলিতে মরেছে, কেউ জেলে গিয়েছে, আর যাদের বাবার পয়সা ছিল তারা সোজা ইউরোপ, আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছে৷

একুশে জুলাইয়ের সভায় এখন যাঁরা আসছেন, বলা বাহুল্য, তাঁদের অনেকেই একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ক্যাবারে ডান্সার’ বলতেও ছাড়েননি৷ কিন্তু, তাঁরাই এখন তৃণমূল কংগ্রেসে শোভাবর্ধনে অগ্রাধিকার পান৷ ভাগ্যিস ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ে ১৩ জন তরুণ পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন!

দেশের জন্য লড়াই করে প্রাণ দিয়ে শহিদত্ব বরণ করা এক জিনিস৷ রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু আর এক ব্যাপার৷ বিশেষ করে আপন স্বার্থে কেউ যদি তাকে পুঁজি করে, তাহলে তার চাইতে জঘন্য ব্যাপার আর কিছু হতে পারে না৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ঘটনার পর এমন অনেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন যাদের আগে কখনও তৃণমূল কংগ্রেসের চৌহদ্দিতে দেখা যায়নি৷ কেশপুরে তৃণমূল করার দায়ে সিপিএম যেভাবে গ্রামের পর গ্রাম ধরে সন্ত্রাস চালিয়েছিল, গণতান্ত্রিক ভারতে তার তুলনা মেলা ভার৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েছিলেন, কেশপুরের সময়ে কিন্তু তাঁদের টিকিও দেখা যায়নি৷ সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের কান্না তখন বোধহয় তাঁরা শুনতে পাননি৷ হয়তো বধিরতার সমস্যা ছিল৷

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিহাস ক্ষমতায় উত্থানের ইতিহাস৷ দুঃখের বিষয়, সেই উত্থানের ইতিহাসে কংগ্রেস এবং পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেসের সাহসি লড়াইয়ের অনেক অধ্যায়ই মলিন হয়ে গিয়েছে৷ তখন বোধহয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে রকম ক্রাউডপুলার ছিলেন না৷ তাই তাঁর আশপাশে বুদ্ধিজীবী ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যেত না৷ কারণ, তখন বাম আমল৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা মানে হলদিয়া উৎসবে ডাক না পাওয়া৷

এখন অবশ্য সব কিছুই পালটে গিয়েছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনিতেই কান-পাতলা মানুষ৷ তাঁকে জপানো কিংবা চটানো কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার৷ ক্ষমতা মানেই চিটেগুড়৷ আর সেই চিটেগুড়ের আশপাশে অনায়াসেই বেশ বড় বড় কিছু মাছি জুটে যায়৷ সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীরা তখন অনেক দূরে সরে যান৷ দূরবীণ দিয়ে তখন তাঁদের মাথাগুলো গুনতে হয়৷

এবারের একুশে জুলাই সমাবেশের মঞ্চেও অনেক ফ্যাশন প্যারেড দেখা যাবে৷ পাঞ্জাবি কিংবা শাড়ির লেটেস্ট শো সমাবেশে উপস্থিত জনতা প্রত্যক্ষ করবেন৷ গানাবাজনাও হবে৷ কিন্তু, ১৯৯৩ সালের সেই দিনটিতে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের অনেককেই হয়তো ওই মঞ্চের ধারে কাছে দেখা যাবে না৷ কারণ, সেই দিনটি তাঁরা আজও ভুলতে পারেননি৷

বাংলাদেশ সময়: ২২:১৫:৪৩   ৩৩৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কানাডায় এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, চার বাংলাদেশি আহত
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চায় জাতিসংঘ - গুতেরেস
ব্রাজিলে করোনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়াল
ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হার লিভারপুলের
ফেসবুক বন্ধ করল মিয়ানমারে সামরিক জান্তা
করোনার বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ কার্যকর স্পুটনিক ভি
করোনার ছোবলে থামছে না প্রাণহানি, মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত

আর্কাইভ