নির্বাচনের পরিবেশ না পেলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচন থেকে সরে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে বুলবুলের এমন বক্তব্যকে আবেগতাড়িত বলছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
শুক্রবার রাজশাহী চেম্বর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বোর্ড রুমে প্রথম আলো আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ মন্তব্য করেন। এতে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদও বক্তব্য দেন।
বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই জানিয়ে বুলবুল বলেন, সিডিউল ঘোষণার পরে আমার কর্মীদের নামে সাতটা মামলা হয়েছে। ওসিদের টেলিফোন করলে তারা বলেন- ওপরের নির্দেশে মামলা হয়েছে। গত রাতে আমার তিনজন কর্মীকে ধরে নেয়া হয়েছে। কার নির্দেশে এসব হচ্ছে আমরা বুঝি।
তিনি অভিযোগ করেন, খোদ সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের জোর করে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করানো হচ্ছে। আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। অথচ বলা হচ্ছে- এটা নাটক। এনিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচন কমিশন রেফারি হয়েও মাঠে নেই।
বুলবুল বলেন, পুলিশ-প্রশাসন, নির্বাহী বিভাগ অদৃশ্য ইশারায় কাজ করছে। আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, তারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কি-না তা নিয়েও সন্দিহান। তারা বলছেন, একজন প্রার্থী জিতে আছেন। তারই ইন্ধনে এ সব হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে তারও সংশয়ের কথা জানান বুলবুল।
তবে বুলবুলের এই বক্তব্যকে আবেগতাড়িত ও ক্ষোভের প্রকাশ বলে উল্লেখ করে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তিনি কখনো বলছেন- এ নির্বাচন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের নির্বাচন; কখনো বলছেন- সরকারের চেহারা উন্মোচনের নির্বাচন। আবার এটাও বলছেন- নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না।
বিএনপির আমলের কয়েকটি নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে লিটন বলেন, এখন সে রকম নির্বাচন হয় না। খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচন বিএনপি দেখেছে। সেখানে অনিয়ম হয়েছে এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তারা দিতে পারেনি। ওই দুই নির্বাচনে অনিয়ম হলে তারা এ সিটি নির্বাচনে অংশ নিত না।
লিটন জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড তিনি এবং তার কর্মীরা করবেন না, হতেও দেবেন না। শান্তি-সম্প্রীতির শহর রাজশাহী। সম্প্রীতির মাধ্যেই নির্বাচনের দিন পর্যন্ত পার করতে চান। নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রাখতে, ভোটারদের মন জয় করতে সৌহর্দ্য ও সম্প্রীতি নিয়ে কাজ করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান লিটন।
পরে বিকেলে নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে লিটন বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী বুলবুল বলছেন- নির্বাচনের আগেই কেউ একজন জিতে আছে। নির্বাচনে কারসাজি ও অনিয়ম করে নাকি একজনকে জিতিয়ে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে তিনি ভোটারদের ও তাদের মতামতকে ভোট করছেন। কারণ নির্বাচনে কে বিজয়ী হবে তা ভোট দিয়ে নির্ধারণ করবে জনগণ। বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হয়ে কোনো কাজই করেননি বলেও অভিযোগ করেন লিটন।
এর আগে হযরত শাহ মখদুম (রহঃ) দরগা জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন লিটন। পরে সেখানকার মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত তালুকদার আব্দুল খালেকসহ শীর্ষ নেতারা।
অন্যদিকে, সকালে নগরীর বিনোদপুর, বুধপাড়া, মির্জাপুর ও মোহনপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন বুলবুল। সেখানে লিটনের এমন বক্তব্যকে অপপ্রচার উল্লেখ করে তাতে কান না দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান সদ্য সাবেক এই মেয়র।
তিনি বলেন, নির্বাচিত হয়ে মাত্র ২৬ মাস দায়িত্বপালনের সুযোগ তিনি পেয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বাকি সময় তাকে নগর ভবনের বাইরে কাটাতে হয়েছে। যে টুকু সময় পেয়েছেন নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করেছেন। ২০৫০ সালের মধ্যে আধুনিক রাজশাহী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবারো ভোট চাইছেন বুলবুল।
এদিন ধানের শীষের প্রচারণায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মন্টু, মতিহার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন, মতিহার থানা নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রইসুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১০:২১ ৩৯০ বার পঠিত