শেষ হলো সিপিসি সম্মেলন: রোহিঙ্গাদের নি:শর্তভাবে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » শেষ হলো সিপিসি সম্মেলন: রোহিঙ্গাদের নি:শর্তভাবে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান
বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০১৭



---বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিঃশর্তভাবে দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে। সেখানে তাদের স্থায়ী নিরাপত্তাসহ পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ)’র ৬৩তম সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে গৃহীত সর্বসম্মত এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। বিবৃতিতে এবিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিএ সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনের সমাপনী পর্বে বাংলাদেশসহ সদস্য দেশগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে বিবৃতিটি উত্থাপন করা হয়। পরে সর্বসম্মত ভাবে বিবৃতিটি গ্রহণ করা হয়। সম্মেলন থেকে এই বিবৃতিটি সিপিএভূক্ত সকল সংসদ, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে পাঠানোর জন্য সিপিএ সেক্রেটারী জেনারেলকে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মিয়ানমারে এই উদ্বেগজনক ঘটনা অব্যাহত থাকলে সিপিএ’র পরবর্তী সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে তা উত্থাপন করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্স। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন (সিপিএ) ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আয়োজিত এই সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রেজুলেশন নেয়ার বিষয়ে জল্পনা ও ঐকমত্য থাকলেও সিপিএর বিধিগত জটিলতায় শেষ পর্যন্ত রেজুলেশন নেয়া যায়নি। সিপিএ’র বিধি অনুয়ায়ী কোন বিষয়ে রেজুলেশন নিতে হলে ৬০ দিন আগে প্রস্তাব আকারে তা দাখিল কতে হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুটি যেহেতু সাম্প্রতিক ঘটনা সে হিসেবে এ বিষয়ে রেজুলেশন নেয়ার সুযোগ নেই। তাই এ বিষয়ে একটি সুপারিশ গ্রহণ করে বিবৃতি প্রদান করেছে সিপিএ।
সিপিএ চেয়ারপার্সন ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাপনী অধিবেশনে চার পৃষ্টার এই বিবৃতিটি উত্থাপনের পর অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত প্রতিনিধিরা টেবিল চাপড়ে সিপিএ নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানান। এসময় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ফোর নিয়ে আনুষ্ঠানিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সিপিএ’র বিবৃতি অনুযায়ী চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ মিয়ানমারের উপর আরো বেশী চাপ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সম্মেলন শেষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সিপিএ সম্মেলনে কোন নির্ধারিত এজেন্ডা না থাকলেও সদস্য দেশগুলোর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং-এর আয়োজন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের পদক্ষেপ ও সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবের পক্ষে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন জানায়। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে একটি বিবৃতি গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এই সংকটের দ্রুত সমাধান হবে বলে সিপিএ আশা করছে। আর কমনওয়েলথভূক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের পাশে থাকার যে প্রতিশ্রতি দিয়ে তা সমস্যা সমাধানে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ওই বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের উপর হত্যা নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিত নাগরিকরা যে মানবেতর সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তার দ্রুত সমাধান হতে হবে। সেখানে রোহিঙ্গা নিধনযোগ্য চলছে। মানবাধিকারের চরম লংঘন হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারকে অবিলম্বে নিঃশর্ত ভাবে এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজভূমে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদেরকে স্থায়ী ভাবে পূনর্বাসন করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের নিরাপত্তা, জীবন-জীবিকা ও নারগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, স্যানিটেশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশে পাশে থাকার জন্য কমনওয়েলথভূক্ত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
এবিষয়ে সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সুপারিশ, বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা, ইন্টার-পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন (আইপিইউ)’র ১৩৭ তম সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবনার আলোকে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হোক।
এদিকে সিপিএ সম্মেলন গতকাল আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছে। দিনব্যাপী সাধারণ অধিবেশন শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিং-এ সিপিএ’র বিদায়ী চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, নতুন চেয়ারপার্সন ক্যামেরুনের ডেপুটি স্পিকার এ্যামেলিয়া মোনজোয়া লিফানকা, সিপিএ’র সেক্রেটারী জেনারেল আকবর খান, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় স্পিকার সফলভাবে সিপিএ সম্মেলন শেষ করতে পারায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সিপিএ ও আইপিইউ সম্মেলনের সফল ভাবে আয়োজন থেকে আমাদের অর্জন অনেক। এটা আমাদের গণতন্ত্র ও সংসদের অগ্রযাত্রায় বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বিশ্ববাসী সচক্ষে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দেখার সুযোগ পেয়েছে। এই সম্মেলন আমাদের গণতন্ত্রের ইতিহাসে মাইল ফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, সরাসরি ভোটে আমি এই সংস্থার চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছিলাম। গত তিন বছর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমার অর্জন অনেক। এখানে থেকে অনেক কিছু দেখার ও শেখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশও এখান থেকে অনেক কিছু পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ৯:২১:৫৫   ৫৭৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কানাডায় এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, চার বাংলাদেশি আহত
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চায় জাতিসংঘ - গুতেরেস
ব্রাজিলে করোনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়াল
ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হার লিভারপুলের
ফেসবুক বন্ধ করল মিয়ানমারে সামরিক জান্তা
করোনার বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ কার্যকর স্পুটনিক ভি
করোনার ছোবলে থামছে না প্রাণহানি, মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত

আর্কাইভ