বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে পাট খাতের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জন করতে হবে। আমরা সুন্দর একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি। একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। এজন্য পরিবেশকে দূষণ ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। রাইস মিলারদের শতভাগ পাটের তৈরি বস্তা ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এতে সামগ্রিক বিবেচনায় আপনারা লাভবান হবেন। পরিবেশের বিষয় তো আছেই। তাছাড়া একেকটি চালের বস্তার ওজন ৪০০ গ্রামের মতো। চালের সাথে আপনারা বস্তার দামও পেয়ে যাচ্ছেন।
মন্ত্রী আজ রংপুরে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলার পাট চাষি, মিল মালিক, ব্যবসায়ী এবং পাটখাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। পাট অধিদপ্তর ও জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের উদ্যোগে রংপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ সভার আয়োজন করা হয়।রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আসাদুজ্জামান বাবলু, রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকার, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুর রউফ। এছাড়া পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরাসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রতিনিধি, অটো রাইস মিল ব্যবসায়ী, পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী, বস্তা ব্যবসায়ী, জুট মিল মালিক প্রতিনিধি, চালকল মালিক প্রতিনিধি এবং পাট চাষিবৃন্দ।
মন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিতে পাটের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার এবং পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুশাসন ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্ত্রী আরো বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যমূলক ব্যবহার আইন-২০১০’, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যমূলক ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৩’ এবং ‘পাট আইন, ২০১৭’ প্রণয়ন করেছে। এ আইনগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের নিমিত্ত সংসদ সদস্য/জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান/সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র/পৌরসভার মেয়রকে উপদেষ্টা এবং জেলা প্রশাসকদের আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন, দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, শেরপুর জেলাসহ চাল উৎপাদনপ্রবণ ১৮টি জেলার চালকলসমূহে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। উল্লিখিত আইন বাস্তবায়নে জেলা চেম্বার, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, চালকল মালিক সমিতি, চালকল মালিক এবং ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিসহ মোট ১৯টি পণ্যের উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীদের সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলব এ আইন বাস্তবায়নে আপনারা ধীরে ধীরে কঠোর হন।
মন্ত্রী পাটকল মালিকদের ৫০ কেজির চালের বস্তা ছাড়াও ২৫/৩০ কেজির বস্তা তৈরির আহ্বান জানান। যেহেতু বেশিরভাগ পরিবারে মাসে ২৫/৩০ কেজি চাল লাগে। কাজেই ছোট বস্তা পেলে রাইস মিলাররাও লুফে নেবে।
পাট বীজ উৎপাদনে বিদেশের ওপর নির্ভরশীলীলতা কাটিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, পাট অধিদপ্তরের অধীনে উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদনের জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ৩৬ টি জেলার ১৫০ টি উপজেলায় পাট বীজ উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এজন্য প্রতি উপজেলায় ৩০০ জন করে পাট চাষি বাছাই করা আছে যারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে পাট বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি পাচ্ছে। কিন্তু এসকল প্রণোদনা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত পাট চাষিরা পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে যেজন্য আমরা তেমন সুফল পাচ্ছি না। আরও একটি অভিযোগ রয়েছে কৃষকরা সময়মতো পাট বীজ পায় না। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সক্রিয় হবার নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরে মন্ত্রী রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) আয়োজিত ‘বহুমুখী পাট পণ্য মেলা ২০২৪’-এর উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫০:১২ ৯২ বার পঠিত