রমজানে জাকাত ও ফিতরা আদায়ের গুরুত্ব

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » রমজানে জাকাত ও ফিতরা আদায়ের গুরুত্ব
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫



রমজানে জাকাত ও ফিতরা আদায়ের গুরুত্ব

পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত বন্দেগি আর দানখয়রাতের বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কীভাবে বেশি বেশি পুণ্যকর্ম করে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়।

আমরা যেভাবে নামাজ আদায় করাকে ফরজ জানি তেমনি আল্লাহর রাস্তায় দান ও জাকাত প্রদানও ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোর একটি। পবিত্র কোরআন করিমে বিরাশি জায়গায় আল্লাহ তায়ালা সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন। আর সবখানেই সালাতের সাথে সাথে জাকাত প্রদানের নির্দেশও দিয়েছেন। এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যবহ বিষয়।

জাকাত প্রদান করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো ও জাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা , আয়াত: ৪৩)।

সালাতের সাথে জাকাতের সম্পর্ক ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। সংগতিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে জাকাত ব্যতীত সালাত কায়েম হওয়া সম্ভব নয়। মূলত সালাত ও জাকাত ব্যতীত পরিপূর্ণভাবে ইসলামি জীবন গঠন অসম্ভব। পৃথিবীর বুকে মানুষ যাতে সুখে শান্তিতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারে তার জন্যই বান্দার দয়াময় আল্লাহ তায়ালা জাকাতের ব্যবস্থা করেছেন।

শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির নামই ইবাদত নয়। সংসারে জন্মগ্রহণ করে সংসারধর্ম রক্ষা করে, সত্য ও সঠিক পথে চলে মানব জীবনে প্রতিটি কর্মই ইবাদতের মধ্যে শামিল। হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজানের পর নিজ কক্ষ থেকে বের হয়ে মসজিদে আগমন করতেন এবং সমবেত মুসল্লিগণের সাথে বসতেন এবং উপস্থিত অনুপস্থিত প্রত্যেক মুসলিম ভাই বোনদের খবরাখবর নিতেন ও প্রত্যেকের জাগতিক সমস্যার সমাধান করতেন।

সহিহ বোখারি শরিফে এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,

হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত মুআজ (রা.) কে ইয়ামেন দেশে শাসক হিসেবে প্রেরণ করেন। প্রেরণকালে তিনি বলেন, সেখানকার অধিবাসীদের (প্রথমে) এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহ্বান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। যদি তারা তা মেনে নেয়, তাহলে তাদের অবহিত করবে যে, আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে জাকাত ফরজ করেছেন। এটা ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে এবং দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে। (সহিহ বুখারি)।

ইসলামে সালাত ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য করার অবকাশ নেই। ইসলাম শুধু উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হন নাই। বাস্তব জীবনে জাকাতকে ফরজ কার্যের আওতায় এনে প্রতিফলন ঘটিয়েছে। জাকাত দ্বারা দরিদ্র জনসাধারণের জন্য একটি চিরস্থায়ী দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হজরত মহানবী (সা.) জাতীয় দৈন্য দুর্দশার মুক্তি সাধনায় বহু ত্যাগ স্বীকার করে তিনি বায়তুল মালকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে মুসলমান জাতির প্রাণশক্তি ছিল বায়তুল মাল। তখন জাকাত আদায় করার জন্য আদায়কারী নিযুক্ত ছিল। তারা নিয়মিত জাকাত আদায় করে বায়তুল মালে জমা দিতেন এবং তা থেকে দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে যথাবিধি বণ্টন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসার কল্পে ব্যয়িত হতো।

হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন,

যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি, কেয়ামতের দিন তা বিষধর সাপ ধারণ করবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের উভয় পাশে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ধন, আমিই তোমার জমাকৃত সম্পদ। (বুখারি)

অন্য এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাকাত আদায়কে ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম বলে অভিহিত করে বলেন, ইসলামের ভিত্তি রাখা হয়েছে পাঁচটি জিনিসের ওপর। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহতায়ালা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল। নামাজ কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজ করা ও রমজান মাসের রোজা রাখা (সহিহ বুখারি)।

এছাড়া মাহে রমজানে ফিতরানা আদায়ের গুরুত্বও অনেক বেশি রয়েছে। হাদিসে এসেছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাক্বাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।’ (আবু দাউদ)

হজরত জারির (রা.) বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রামজানের রোজা সাদকাতুল ফিতর আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত আসমান জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব)

মূল বিষয় হলো ফিতরানা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরীব ভাইদের দু:খ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এবং তাদেরকেও ঈদের আনন্দে অন্তর্ভুক্ত করি। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা আল্লাহর রাস্তায় এবং গরীব অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন এতে কিন্তু তার ধন-সম্পদে কমতি দেখা দিবে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

আমরা সবাই জানি, ইসলামে দান-খয়রাতের এবং গরীব অসহায়দের সাহায্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় দানের গুরুত্ব যে কত বেশি তা পবিত্র কুরআন পাঠেই বুঝা যায়। কারণ এ বিষয়টিকে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন।

যেমন পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করে, যারা ক্রোধ দমন করে এবং মানুষকে মার্জনা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)

এই আয়াতে একটি বিষয় আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করেছেন যে, শুধু সুখে থাকলেই যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবো তা কিন্তু নয়, সচ্ছল-অসচ্ছল সব অবস্থাতেই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে। সব অবস্থায় যদি আমরা খরচ করি তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ভালোবাসবেন।

আল্লাহপাক বারংবার আমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, আমরা যেন তার পথে খরচ করি, কিন্তু দেখা যায় আমরা দুনিয়াবী আজে-বাজে কাজে ঠিকই অর্থ সম্পদ ব্যয় করছি অথচ আল্লাহর রাস্তায় দেয়ার ক্ষেত্রে যেন অনীহা প্রকাশ পায়। এর কারণ হলো শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা যোগায় যে, তুমি যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করো তাহলে তোমার ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাবে আর তুমি দরিদ্র হয়ে যাবে।

অথচ পবিত্র কোরআন বলে যারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে তাদেরকে এর তুলনায় অধিক বৃদ্ধি করে আল্লাহ ফেরত দেন। যেভাবে বলা হয়েছে,

যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের দৃষ্টান্ত সেই শস্যবীজের ন্যায়, যা সাতটি শিষ উৎপন্ন করে এবং প্রত্যেকটি শিষে একশ শস্যদানা থাকে। আর আল্লাহ যার জন্য চান এর চেয়েও বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যদানকারী ও সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬১)

তাই একথা স্পষ্টভাবে বলা যায় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে কেউ গরীব হবে না বরং তাকে আল্লাহ অনেক গুণ বৃদ্ধি করে তা ফেরত দিবেন। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘দান করলে সম্পদ কমে না।’ (মুসলিম)

আমরা যদি আল্লাহর জান্নাত লাভ করতে চাই এবং তার শান্তির ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাই তাহলে আমাদেরকে তার পথে খরচ করতে হবে। গরীব অসহাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে তাদের কষ্ট দূর করতে হবে।

তাই আমরা যদি সঠিক নিয়মে জাকাত ও ফিতরা আদায় করি তাহলে আমাদের এই রোজা এবং অন্যান্য ইবাদতগুলো আল্লাহপাকের দরবারে বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের ক্ষেত্রেও জাকাত ও ফিতরার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

তাই আসুন, পবিত্র এ মাহে রমজানে আমাদেরকে সব রকমের পুণ্যকর্মের পাশাপাশি জাকাত ও ফিতরানা আদায়ের বিষয়েও বিশেষভাবে দৃষ্টি দেই। আল্লাহপাক মুসলিম উম্মাহকে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সঠিক নিয়মে জাকাত ও ফিতরানা প্রদান করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১২:১৬:৫১   ৪৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকে সংরক্ষণ করার জোর তাগিদ দিয়েছেন- পার্বত্য উপদেষ্টা
বাস্তবসম্মত ও ব্যবসাবান্ধব বাজেটের আশ্বাস দিলেন অর্থ উপদেষ্টা
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার
স্টারলিংকের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর করলো বিটিআরসি
বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার
ক্রান্তিকালে দেশ, আয় কমছে শ্রমজীবী মানুষের: রিজভী
বিভেদের রাজনীতি আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট করেছে : মির্জা ফখরুল
সাতক্ষীরায় নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ সভা
তিন উপদেষ্টার ভবদহ সফর ১০ লাখ মানুষের মনে আশার সঞ্চার করছে
বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সংযোজনে সরকার সহযোগিতা করবে

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ