“নারায়ণগঞ্জকে বাঁচাতে হলে এখানকার নদীকে রক্ষা করতে হবে। শীতকালে নদীর পাড়ে দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যেত না, অথচ মানুষ সেই দূষিত পানিতেই গোসল করেছে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।” শনিবার (১০ মে) ‘গ্রীন এন্ড ক্লীন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এভাবেই নারায়ণগঞ্জের নদ-নদীর করুণ চিত্র তুলে ধরেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
তিনি আরও বলেন, আজকের তীব্র গরম আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে বৃক্ষরোপণের অপরিহার্যতা। গাছ হলো অক্সিজেনের কারখানা, তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও আমাদের ব্যাপকহারে গাছ লাগাতে হবে। একসময়ের খাল-নালা সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জের সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তিনি খালগুলো পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান, যাতে বর্ষাকালে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হয়। এই কাজে নারায়ণগঞ্জবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বিগত বিশ বছরে নারায়ণগঞ্জের সবুজায়ন হারানোর চিত্র তুলে ধরে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত খাল-বিল, নদী ধ্বংস করেছি। এভাবে কি আমরা বাঁচতে পারবো? নদী না বাঁচলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। নদীকে কেন্দ্র করেই সভ্যতা গড়ে ওঠেছে। নারায়ণগঞ্জ প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এই নদীর কল্যাণেই, এখানকার ব্যবসাবাণিজ্যও নদীর উপর নির্ভরশীল।”
নারায়ণগঞ্জকে বাঁচাতে শুধু জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি ব্যবসায়ী সমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের সামনের অংশ পরিষ্কার রাখা এবং ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করার অঙ্গীকার করলে নারায়ণগঞ্জ খুব সহজেই পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড্রেন ও খাল পরিষ্কার করতে গিয়ে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত জিনিসের উদাহরণ টেনে তিনি সামান্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন।
নারায়ণগঞ্জবাসীকে জেলা প্রশাসককে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এই শহর বিপ্লবীদের শহর, প্রতিটি আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এখানকার মানুষ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে। একসময় জাতীয় ফুটবল দলে নারায়ণগঞ্জের খেলোয়াড়দের আধিক্য ছিল। একটি সুন্দর সমাজ গঠনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের এখনই ভাবতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়েও কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর সেবার মানে কি খুব বেশি পরিবর্তন এসেছে? শিশুদের পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে, তাই তাদের বিকাশের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. নূর কুতুবুল আলম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. মো. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. মো. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি মো. মুস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, গণঅধিকার পরিষদের জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নাহিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক নিরব রায়হান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ জাবেদ আলম।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪১:২৭ ৮ বার পঠিত