
জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের মেইয়া এলাকায় এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে, যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। শাহনাজ আক্তার (১৮) নামের এক কিশোরী মেয়ে রূপান্তরিত হয়ে ছেলেতে পরিণত হয়েছেন, এবং এ খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে উৎসুক জনতা তাকে একনজর দেখতে তার বাড়ির সামনে ভিড় জমাচ্ছে।
শাহনাজ, একজন কর্মজীবী কিশোরী এবং গার্মেন্টস কর্মী। তার বাবা সামছুল হক। পূর্বে তাদের পরিবারে দুই বোন ও এক ভাই ছিল, যা এখন পরিবর্তিত হয়ে দুই ভাই ও এক বোন হয়েছে। শাহনাজ ২০২৪ সালে এসএসসি পাশ করেছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শাহনাজ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শরীরে তীব্র জ্বর আসে, এবং প্রাথমিক চিকিৎসায় তা না কমায় ডাক্তার দেখানো হয়। পরীক্ষার পর জানা যায়, তার শরীরে পরিবর্তন ঘটছে – সে নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হতে চলেছে। টানা তিন মাস ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকার পর, গত মার্চ মাসে শাহনাজ নারী থেকে পরিপূর্ণ একজন পুরুষে রূপান্তরিত হন। শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক একজন ছেলে। তার নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘তুহিন’।
রূপান্তরের পর তুহিন জানান, এই পরিবর্তনটি ঢাকায় থাকা অবস্থায় ঘটেছিল, যখন তিনি পরিবারের সাথে ছিলেন না। প্রথমে লোকলজ্জার ভয়ে তিনি পরিবারকে বিষয়টি জানাতে পারেননি। তিনি চিন্তিত ছিলেন যে তার এই পরিবর্তন সমাজ ও পরিবার মেনে নেবে কিনা। বহু ভাবনাচিন্তার পর যখন তিনি পরিবারকে বিষয়টি জানান, তখন তারা তাকে বাড়িতে আসতে বলেন। বাড়ি আসার পর তিনি দেখতে পান, সবাই তাকে স্বাভাবিকভাবে তাদের ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছে। এই স্বস্তির অনুভূতি প্রকাশ করে তুহিন বলেন, “আমার খুব ভালো লাগছে। মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হওয়ায় আমার কোনো দুঃখ নেই। আমি এখন বাবার কাজে সাহায্য করতে পারব।”
তুহিনের বাবা আঃ বাছেদ বলেন, “আমার দুই মেয়ের মধ্যে শাহনাজ ছোট ছিল। সে পরিবারের হাল ধরতে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতো। কিছুদিন ধরে শুনছিলাম সে অসুস্থ, কিন্তু বাড়িতে আসছিল না। ঈদের আগে ফোন করে জানায় সে মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখতে পাই যে তার শারীরিক গঠন ও কন্ঠ পরিবর্তন হয়ে ছেলের মতোই দেখা ও শোনা যাচ্ছে। পরে তাকে বাড়ি আসতে বললে ঈদের পরের দিন সে বাড়িতে আসে।”
তিনি আরও জানান, তুহিনের বর্তমান নাম, পুরুষের মতো চুল কাটা, পোশাক পরিধান করা – সবকিছুই তার বাসার মালিক করে দিয়েছেন। এতে তার কোনো দুঃখ নেই। সৃষ্টিকর্তার যা ভালো, তিনি তাই করেছেন উল্লেখ করে শামসুল হক বলেন, “আমি ও আমার পরিবার আরেকটি ছেলে পেয়ে অনেক খুশি। এখন আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সমাজের মানুষ অনেকেই অনেক কিছু বলছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
তুহিনের দুলাভাই মিজানুর রহমান বলেন, “তুহিন যখন শাহনাজ ছিল, তখন ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র খুঁজছিলাম। এখন ওর জন্য পাত্রী খুঁজতে হবে। শালিকা আমার শালা হয়েছে, এতে আমরা অনেক খুশি।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ দেবাশীষ রাজবংশী জানান, এবিষয়ে লিঙ্গ নির্ধারক ছেলে বা মেয়ে কি হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা সাপেক্ষে জানা যাবে। মেডিকেল সাইন্সে এধরনের ঘটনা ঘটার কোন সুযোগ নাই।
এই ঘটনা স্থানীয় এলাকায় এক অভূতপূর্ব আলোচনার জন্ম দিয়েছে, এবং অনেকেই তুহিনকে দেখতে তার বাড়িতে আসছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৪:২০ ৪০৪ বার পঠিত