জামালপুরে সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ফেরানোয় প্রধান শিক্ষককে হুমকি

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » জামালপুরে সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ফেরানোয় প্রধান শিক্ষককে হুমকি
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫



জামালপুরে সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ফেরানোয় প্রধান শিক্ষককে হুমকি

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কিন্ডারগার্টেনমুখী করার প্রতিবাদ করায় এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে ভাটারা ইউনিয়নের বারইপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক ও তার পরিবার শনিবার (১২ জুলাই) সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন।

তারা জানান, গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) উপজেলা সরকারি প্রাথমিক দপ্তর থেকে দেওয়া পাঁচটি চারা গাছ বিনষ্ট হওয়ার ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক। উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাহিদা ইয়াসিন ও সহকারী শিক্ষা অফিসার খোরশেদ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং এঘটনার অন্তরায় অবগত আছেন বলে জানান তারা।

বিদ্যালয়, স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯৩২ সালে স্থাপিত বারইপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মরহুম শাহ আব্দুল করিম ও তার ছেলে ফজলুল হকসহ কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি মোট ৫৩ শতাংশ জমি দান করেন। যা এখনো বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে। তবে কোনো জমিদাতাই তাদের দানকৃত জমি বিদ্যালয়ের নামে লিখে দেননি। যার ফলে ম্যানেজিং কমিটির জমিদাতা সদস্য নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

এরপর ২০০৭ সাল থেকে ফজলুল হক জমিদাতা হিসেবে ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ২০২৪ সালে বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণের প্রকল্প এলে নিজাম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জমিদাতা হিসেবে দাবি করে কাজে বাধা দেন। প্রধান শিক্ষক তার দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখেন যে, তার কোনো স্বত্ব নেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজাম উদ্দিন আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা থেকে বিরত রাখার হুমকি দেন। এরপর থেকেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু হয়।

প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, ওয়াশ ব্লক নির্মাণের স্থান নিজাম উদ্দিনের চাচা, সাবেক শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কাজ শুরু হওয়ার পর নিজাম উদ্দিনের মামলার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এই ঘটনার পর থেকেই নিজাম উদ্দিন ও তার অনুসারীরা প্রধান শিক্ষককে নানাভাবে হয়রানি ও ক্ষতির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৫৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০-৭০% শিক্ষার্থী নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে। অবশিষ্ট শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোচিং ও কিন্ডারগার্টেনে লেখাপড়া করে। এই সুযোগে স্কুলের সহকারী শিক্ষক ইয়াসমীন নাহার হ্যাপি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রলোভন দেখিয়ে তার স্বামী ইমরান হোসেন বাবুর ‘চন্দ্র বিন্দু কিন্ডারগার্টেন’-এ ভর্তি করান। এর প্রতিবাদ করেন প্রধান শিক্ষক হেলেনা খাতুন, যা তার জন্য ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ পরিস্থিতি তৈরি করে।

সহকারী শিক্ষক ইয়াসমীন নাহার হ্যাপি তার বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী কাফিয়া জান্নাত, পঞ্চম শ্রেণির ইয়াম, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তোয়া মনিসহ আরও অনেককে প্রলোভন দেখিয়ে তার স্বামীর কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করান। প্রধান শিক্ষক হেলেনা খাতুন শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি দেখে খোঁজ নিয়ে এই ঘটনা জানতে পারেন। তিনি কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের নিজ বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে সহকারী শিক্ষক ইয়াসমীন নাহার হ্যাপি ও তার স্বামী ইমরান হোসেন বাবুর সাথে বিবাদ সৃষ্টি হয়।

প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সহকারী শিক্ষক ও তার স্বামী ইমরান হাসান বাবু পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।

গত ৮ই জুলাই দুপুরে বারইপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির জমিদাতা সদস্য ফজলুল হকের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ৫টি বনজ গাছের চারা বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় লাগানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এই বিষয়টি সহকারী শিক্ষক ইয়াসমীন নাহার হ্যাপি তার স্বামী বাবুকে জানান। এরপরই কতিপয় সাংবাদিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পাঁচটি চারা গাছ সম্পর্কে জানতে চান। পরে প্রধান শিক্ষক জমি সংক্রান্ত বিরোধ জটিলতার কারণে চারা গাছগুলো লাগানো বিলম্ব হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান।

এ সময় ভাটারা ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি আসলাম হোসেন বাচ্চু, ইমরান হোসেন বাবু, তারা প্রামাণিক, তোতা মণ্ডলসহ আরও অনেকে বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সহায়তায় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যান এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঁচটি চারা গাছ বিনষ্ট হওয়ার সংবাদ প্রকাশ করেন। যা অত্যন্ত মানহানিকর বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং শিক্ষার্থীদের কিন্ডারগার্টেনমুখী করার প্রতিবাদ করায় সহকারী শিক্ষক হ্যাপি ও তার স্বামী বাবু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এমনটি দাবি করেন প্রধান শিক্ষক ও তার পরিবারবর্গ।বর্তমানে এই ঘটনার জের ধরে প্রধান শিক্ষকের পরিবার নানা হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। তাই তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন।

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ইয়াসমীন নাহার হ্যাপি কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি কোন শিক্ষার্থীকে কিন্ডারগার্ডেন মুখী করিনি, এটি মিথ্যা অভিযোগ। ইমরান হাসান বাবু বলেন, এটা ষড়যন্ত্র।

উল্লেখ্য, এস এস টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও চন্দ্র বিন্দু কিন্ডার গার্ডেনের পরিচালনা করেন। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি কলেজ ফাঁকি দিয়ে তার কেনা ভেকু দিয়ে মাটির ব্যবসা করে বেড়ান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০০:০৫   ১৭১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা ভাবছে সরকার : উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
চন্দনাইশের স্বপ্ন বিলাসের স্বপ্ন সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে : উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধানের জন্য ২৮-২৯ জুলাই জাতিসংঘের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অগণতান্ত্রিক শক্তির বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে: যুবদল সভাপতি
টালিউডে অভিষেক হচ্ছে নওশাবার
মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যা জানালো র‍্যাব
আগে সংস্কার পরে নির্বাচন হবে এটা শুনতে চাই না : মঈন খান
গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনো মাঠে আছে: নাহিদ
ইতিহাস গড়ে প্রথমবার বিশ্বকাপে ইতালি

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ