জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে তোজাম্মেল হক তুজাল (৩২) নামের এক ট্রাকচালককে নির্মমভাবে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এই বর্বরোচিত হামলা ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আহত তুজালের বড়ভাই সুজাল সোমবার (১৪ জুলাই) সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন যে, গত শুক্রবার (৪ জুলাই) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে আওনা ইউনিয়নের স্থল গ্রামের উজ্জ্বল মিয়ার ছেলে জনি তার বাড়িতে তুজালকে ফোন করে ডেকে নিয়ে তার ভাই ও বন্ধুদের সাথে নিয়ে এই ঘটনা ঘটায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জনি ও তুজাল উভয়ই একই মালিকের ড্রাম ট্রাক চালাতেন। মালিককে ভাড়ার টাকা ঠিকমতো বুঝিয়ে না দেওয়ায় জনিকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়। জনি সন্দেহ করে, তুজালের কারণেই তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এই সন্দেহের বশেই গত শুক্রবার রাতে জনি ফোন করে তুজালকে তার বাড়িতে ডেকে আনে।
জনির বাড়িতে তুজালকে ডেকে আনার পর জনির অনুসারীরা তুজালের মুখের ভেতর গামছা ঢুকিয়ে হাত-পা বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে দেয়। বেধড়ক মারধরের কারণে তুজাল ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারায়। পরে কবির নামে একজন তুজালের বাড়িতে এই সংবাদ দিলে তার পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে আসেন এবং তুজালকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু নির্যাতনকারী জনি ও তার অনুসারীরা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে আহত তুজালকে নিয়ে যেতে বাধা দেয়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে আসে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় তুজালকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।
তুজালের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে জামালপুর রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এই ঘটনায় আহত তুজালের বড়ভাই মোজাম্মেল হক মোজা বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাদী মোজা আক্ষেপ করে বলেন, “তারা আমার ভাইকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। জানিনা সে জীবনে আর সুস্থ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে কিনা। এমন নির্মমভাবে তারা মারধর করে এখন আবার বিষয়টি পরকীয়ার অজুহাতে ভিন্নখাতে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ কঠোর বিচার চাই।”
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জনির বাড়িতে গিয়ে তার ঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায় এবং তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাশেদুল হাসান রাশেদ বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি উঠেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৪:২৩ ১৪৬ বার পঠিত