
জামালপুর প্রতিনিধি : একসময় জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আজ সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি পণ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তবুও লোকজীবনে এর বহুমাত্রিক ব্যবহার থাকায় বংশপরম্পরায় এই শিল্প এখনও টিকে আছে কিছুটা।
একটা সময় গৃহস্থালির বেশিরভাগ পণ্যই তৈরি হতো বাঁশ ও বেত দিয়ে। এই শিল্পের ওপর নির্ভর করেই অনেকের সংসার চলত। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া ও প্লাস্টিক সামগ্রীর সহজলভ্যতার কারণে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প এখন সংকটে। প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র টেকসই ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় মানুষ বাঁশ ও বেতের পণ্যের চেয়ে সেদিকেই বেশি ঝুঁকছে।
ইসলামপুর পৌরসভার ধর্মকুড়া বাজারে গিয়ে কথা হয় একসময়ের পরিচিত এলাকা পাটনিপাড়া গ্রামের পলো ব্যবসায়ী বহর আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি বাঁশ দিয়ে পলো তৈরি করছেন। প্রতি সপ্তাহে ৪-৫টি পলো তৈরি করে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। একেকটি পলো ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও, বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার লাভ কমে গেছে।
গাঁওকুড়া গ্রামের কারিগর লিটন মিয়া ১০ বছর ধরে বাঁশ দিয়ে টাপা (এক ধরনের পাত্র) তৈরি করছেন। তিনি প্রতিটি টাপা ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। একই গ্রামের ব্যবসায়ী হারুন মল্লিক ১২ বছর ধরে বাঁশের তৈরি মাছ ধরার চাই (চাঁই) বিক্রি করছেন। তিনি বিভিন্ন কারিগরের কাছ থেকে এগুলো কিনে হাটে বিক্রি করেন। তবে প্লাস্টিকের সামগ্রীর কারণে তার বেচাকেনা কমে গেছে।
ইসলামপুর ফকিরপাড়া গ্রামের কারিগর দিলীপ সরকার জানান, আট বছর বয়স থেকে তিনি বাঁশের জিনিসপত্র তৈরি ও বিক্রি করেন। এখন নিজে তৈরি করার পাশাপাশি অন্যের কাছ থেকেও কিনে আনেন। তবে বর্ষাকালে বেচাকেনা কমে যায়।
ধর্মকুড়া হাটে বেত দিয়ে তৈরি দাঁড়িপাল্লা, ঝুড়ি, কুলা ও চালুন বিক্রি করতে আসা সোহরাব জানান, এই পেশা টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। হাতে গোনা কিছু পরিবার এখনও পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বেতের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই পেশায় টিকে থাকা খুবই কঠিন। বর্তমানে কিছু সৌখিন মানুষ গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করে এসব পণ্য কেনেন। বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে খাবার কিনে বাড়ি ফেরেন।
বাজার থেকে বাঁশের তৈরি কুলা ও চালুন কিনতে আসা মিজান মিয়া জানান, প্লাস্টিকের সামগ্রী টেকসই ও দামে কম হলেও, প্রয়োজনীয়তা থাকায় তাকে বাঁশের পণ্যই কিনতে হয়েছে।
আধুনিকতা ও প্লাস্টিকের দাপটে বাঁশ ও বেতশিল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচাতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও কারিগরদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৯:১৯ ১৬৯ বার পঠিত