খুলনায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে ভক্ত-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে রূপসা মহাশ্মশান মন্দিরে ভোর থেকে ভক্তরা জড়ো হয়ে দেবীর আরাধনায় অংশ নেন।
ঢাক–ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর পূজার মন্ত্রোচ্চারণে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। পূজারীদের উপস্থিতি ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় মন্দির প্রাঙ্গণ যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল কুমারী পূজা। ছোট্ট একটি কন্যাশিশুকে দেবীর আসনে বসিয়ে পূজা করা হয়।
ভক্তরা জানান, নারীর মধ্যেই দেবীভাব আরোপ করার দর্শন থেকেই কুমারী পূজার প্রচলন। পৌরাণিক ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে, ষোড়শী বয়স পর্যন্ত কুমারী মেয়েদের দেবী রূপে পূজা করার মাধ্যমে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও পূজ্য ভাবনা প্রকাশ পায়।
তন্ত্রশাস্ত্র মতে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের শক্তি কুমারীর মধ্যেই নিহিত। তাই কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী ভোগ্যা নয়, পূজ্যা— এই দর্শনকেই উপলব্ধি করা হয়।
পরিবার নিয়ে রূপসা পূজা মন্দিরে আসেন শীলা রানী।
তিনি বলেন, ‘কুমারী পূজা কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার প্রতীক। ইতিহাসে উল্লেখ আছে, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও নিজের স্ত্রীকে ষোড়শীজ্ঞানে পূজা করেছিলেন। কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা ও অন্নপূর্ণা পূজাতেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে।’
দুপুরে শুরু হয় সন্ধি পূজা, যা শুরু হয়ে ১টা ৪৯ মিনিটে এবং শেষ হয় ২টা ৩৭ মিনিটে।
পূজারীরা জানান, এই সময়েই দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন, তাই সন্ধি পূজা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
শুধু মন্দিরেই নয়, নগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপেও চলছে নানা আয়োজন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি, প্রসাদ বিতরণ ও ভক্তদের মিলনমেলায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। তরুণরা ব্যস্ত সেলফি ও ছবি তোলায়, আবার অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পূজামণ্ডপে।
খুলনা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানান, এবারের দুর্গাপূজায় শহরের ৮০টিরও বেশি পূজামণ্ডপে মহাষ্টমীর আয়োজন চলছে। প্রতিটি মণ্ডপেই নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছেন। এছাড়া স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৬:৫০ ২৬০ বার পঠিত