
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তফসিলের আগেই প্রার্থী ঠিক করতে ব্যস্ত সময় পার করছে দলগুলো।
সারা দেশে আসনভিত্তিক গণসংযোগ করছে বিএনপির মিত্র থেকে প্রতিপক্ষ বনে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। উল্টোচিত্র বিএনপি শিবিরে, একেক আসনে দলটির মনোনয়ন চান অন্তত চার থেকে পাঁচজন প্রার্থী। আর এতে বিভিন্ন আসনে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, প্রভাব পড়ছে ভোটের মাঠে।
এমন বাস্তবতায় ঢাকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সতর্ক। অভ্যন্তরীণ বিবাদে না জড়িয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন ভোটারদের মন জয়ে, খাল পরিষ্কার, নিম্ন আয়ের মানুষকে অনুদান, দুর্ঘটনায় ছুটে যাওয়াসহ নানা সামাজিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকা-১৮ আসনের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। প্রত্যাশা- ইতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোযোগ আর্কষণের।
ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মুহাম্মদ আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘এলাকার মানুষ চান একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি আগামীতে নির্বাচন করুক। যাতে বিএনপির প্রার্থীকে নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারে, সেই কাজ করছি আমরা।’
এই আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘যে বিএনপিকে ভালোবাসে, সে দলের সিদ্ধান্তকে ভালোবাসবে। তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবেন সবাই।’
সমস্যা সবচেয়ে বেশি প্রকট রাজধানীর বাইরে। কোনো কোনো আসনে আটজন, কোথাও বা ১০ জনেরও বেশি রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী। যেমন নেত্রকোনা-৩। মনোনয়ন নিশ্চিতে জোরেশোরে কাজ করছেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। সবাই নিজেকে দাবি করছেন যোগ্য হিসেবে।
নেত্রকোনা-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার মো. মোস্তাফা-ই-জামান সেলিম বলেন, ‘বিতর্কিত লোক নিয়ে তারেক রহমান এবার রিস্ক নেবেন না। গতানুগতিক অমুককে দিতে হবে, তমুককে দিতে হবে- এমন কোনো কথা না।’
একই আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, ‘কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে যাকে মনোনয়ন দেবে দল থেকে তার হয়ে কাজ করবো।’
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কৌশলী অবস্থানে সতর্ক কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। বিতর্ক এড়াতে আগেভাগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে খোলামেলাভাবে কথা বলছেন তারা।
নেতাদের মতে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকার যে বার্তা, তা বাস্তব রূপ নেবে চলতি মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই।
আরও পড়ুন: ২০০ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী নির্ধারণ এ মাসেই: সালাহউদ্দিন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমাদের মনোনয়ন মোটামুটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। আশা করি এই মাসের মধ্যেই মনোনয়ন করা প্রার্থীদের জানিয়ে দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি তো একটি গণসংগঠক। সেখানে প্রতিযোগিতা থাকবে, তবে এটা উত্তরণ করার নেতৃত্ব আমাদের চেয়ারম্যানের রয়েছে এবং তিনি তা উত্তরণ করতে পারবেন।’
দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দল থেকে কিছু কিছু প্রার্থীকে ডাকা হচ্ছে, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। এরপর তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ করে মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রার্থী হতে যে যার কানেকশন কাজে লাগাচ্ছে। তবে বিএনপি দীর্ঘদিনের দল, আমরা দেখেশুনে আন্দোলন-সংগ্রামে যার অবদান রয়েছে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।’
জানা গেছে, এবার তফসিলের আগেই প্রতি আসনে একজন প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন নেতারা। এরইমধ্যে বিরোধ কম, এমন আসনের একক প্রার্থীদের টেলিফোন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৭:৩৯ ১৮ বার পঠিত