
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন; প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে আধুনিক, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব করা। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তারা ভূমির সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের পদ্ধতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করেন। কিন্তু প্রশিক্ষণ শুধু জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়, প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করাই প্রকৃত সাফল্য। সুতরাং সার্ভে ও সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের সকলেরই উচিত অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে জনসেবায় প্রয়োগ করা। তবেই এই প্রশিক্ষণের প্রকৃত মূল্যায়ন হবে এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
সালেহ আহমেদ বলেন; ভূমি প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সার্ভে ও সেটেলমেন্ট কার্যক্রম। ভূমির মালিকানা নির্ধারণ, সীমা নির্ধারণ, রেকর্ড সংশোধন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণে সার্ভে ও সেটেলমেন্টের ভূমিকা অপরিসীম। সঠিক ভূমি জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণের মাধ্যমে নাগরিকদের ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধ হ্রাস পায় এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। এ কারণে কর্মকর্তাদের সার্ভে ও সেটেলমেন্ট বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ আয়োজন করা অত্যন্ত জরুরি। জনকল্যাণে কাজ মানে হলো ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রদানে সততা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া। সাধারণ মানুষ যাতে ভূমি সংক্রান্ত ভোগান্তি থেকে মুক্তি পায়, সেটিই একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। সেবা প্রদানকারীর আন্তরিকতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা নাগরিকের আস্থা বাড়ায় এবং সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করে।
আজ রাজধানীর ভূমি ভবনের কেন্দ্রীয় সেমিনার হলে বিসিএস ক্যাডারভূক্ত (প্রশাসন,পুলিশ,বন, ও রেলওয়ে) এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কর্মকর্তাগণের ১৪০ তম সার্ভে ও সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্স-২০২৫-২৬ ‘সনদপত্র বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান’এ তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মোঃ সাইদুর রহমান । অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। প্রশিক্ষণে পাঁচটি ক্যাডারের ৫৫ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করে সাফ্যলের সাথে সম্পন্ন করেন।
সিনিয়র সচিব বলেন; সার্ভে ও সেটেলমেন্টের মাধ্যমে প্রতিটি খতিয়ানভুক্ত জমির প্রকৃত মালিকানা নির্ধারণ করা হয়। সঠিক মালিকানা নির্ধারণের ফলে ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধ হ্রাস পায় এবং নাগরিকদের সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। জমির সীমানা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করার জন্য মাঠ জরিপ (Field Survey) পরিচালনা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, জিপিএস ও ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করে সঠিক সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়। পুরনো রেকর্ডে যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তা সংশোধনের মাধ্যমে হালনাগাদ ভূমি রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়।
তিনি আরো বলেন; বর্তমানে সার্ভে ও সেটেলমেন্ট কার্যক্রমে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যবহার পেয়েছে। অনলাইন রেকর্ড, জিআইএস ভিত্তিক মানচিত্র, ই-মিউটেশন ও ডিজিটাল খতিয়ান প্রবর্তনের ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনা দ্রুত, স্বচ্ছ ও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। সার্ভে ও সেটেলমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমির প্রকৃত তথ্য সংরক্ষণ ও মালিকানা নিশ্চিত হওয়ায় ভূমি প্রশাসন আরও কার্যকর হচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণে সার্ভে ও সেটেলমেন্টের ভূমিকা সত্যিই অপরিসীম। বর্তমানে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। ডিজিটাল ভূমি জরিপ (Digital Land Survey), এলডিএমএস (LDMS), এবং অনলাইন রেকর্ড ব্যবস্থাপনা সার্ভে ও সেটেলমেন্ট কার্যক্রমকে আধুনিক ও গতিশীল করেছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তারা এসব ডিজিটাল টুল ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে উঠছেন, যা “স্মার্ট ভূমি সেবা” বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোঃ মোমিনুর রশীদ যুগ্মসচিব, পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর; বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১), ড. মাহমুদ হাসান; ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব), এ. জে. এম. সালাহউদ্দিন নাগরী । অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোঃ মোমিনুর রশীদ যুগ্মসচিব, পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ব্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিথ ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৪:১৯ ৬ বার পঠিত