আমি বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সময়মতো হবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » আমি বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সময়মতো হবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫



আমি বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সময়মতো হবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

স্বাধীনতা, সুশাসন, প্রশাসনের দক্ষতা, সক্ষমতা, রাজনৈতিক মনোভাব ও সরকারের অভিপ্রায়ের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। পাশাপাশি নির্বাচনের খরচেও লাগাম টানতে হবে। এর মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। নেতারা বলবে, জনতা শুনবে– ভাঙতে হবে এ নিয়ম। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কী কী কাজ করেছেন, এর হিসাব ভোটারের কাছে বছর বছর দিতে হবে।

শনিবার রাজশাহীতে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব মতামত তুলে ধরেন। নগরীর ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই সংলাপে সঞ্চালক ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে অংশ নেন এনসিপি ও সিপিবির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বিএনপি, জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের কোনো নেতা সংলাপে অংশ নেননি। সিপিডির সহায়তায় দেশের সব বিভাগীয় শহরে এই সংলাপের পরিকল্পনা রয়েছে।

সভায় বিভিন্ন জাতীয় সমস্যা, সংকট ও রাজশাহীর আঞ্চলিক নানা বিষয় নিয়ে পেশাজীবী প্রতিনিধিরা অভিমত তুলে ধরেন। রাজশাহীর পাঁচটি বড় সমস্যা তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। এগুলো হলো– কর্মসংস্থানের অভাব, পানি সংকট, জ্বালানি গ্যাসের সংকট, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের অপ্রতুলতা।

সংলাপের সঞ্চালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য নির্বাচন বিষয়ে বলেন, আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সময়মতো হবে। কারণ, নির্বাচন হওয়ার পক্ষের শক্তি এখন বাংলাদেশে অনেক বেশি। নির্বাচন হওয়ার পক্ষের বড় শক্তি বর্তমান সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তিনি সময়মতো নির্বাচন চান। তাঁর সহযোগীরাও চান নির্বাচন সময়মতো হোক। নির্বাচনের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি এখন যে কোনো সময় চেয়ে অনেক বেশি বলিষ্ঠ। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের পক্ষে। বেসামরিক আমলা, সামরিক প্রশাসন, পেশাজীবী সমাজ, ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, তরুণ সমাজও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন চায়। নির্বাচনের পক্ষে একটি ব্যাপক ঐকমত্য দেশে বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, সংসদে যাদের প্রতিনিধিত্ব নেই, উচ্চকক্ষে তাদের জায়গা করে দিতে হবে। উচ্চকক্ষে প্রতিবন্ধীদের, সমতলের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এসব বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে থাকা উচিত।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলি, তবে সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলি না। আমি পিছিয়ে পড়া কোনো কোনো মানুষের কথা বলি, কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের কিংবা সমতলের আদিবাসীর কথা ঠিকমতো বলি না। আমরা মুক্ত বাকের কথা বলি, কিন্তু যখন সুফি-বাউলদের কথা বলা হয়, তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থানে যাই। তাই, একটা বৈষম্যবিরোধী আইন লাগবে।

সংলাপে রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রোজেটি নাজনিন বলেন, যদি রাজনীতিবিদরা তাদের স্বজনপ্রীতি ভুলে না যান, তবে সুশাসন আসবে না। স্বজনপ্রীতি হলো দুর্নীতির সবচেয়ে বড় শিকড়। যদি রাজনীতিবিদরা স্বজনপ্রীতির লেজুড় ছাড়তে না পারেন, তবে দুর্নীতিমুক্ত হবে না দেশ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসিন খান বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হওয়া উচিত সুশিক্ষা। ভোটারকে সচেতন ও সুশিক্ষা দিতে না পারলে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

সংলাপের মুক্ত আলোচনা পর্বে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম মাসুদ বলেন, আমরা গতানুগতিকভাবে যেসব কথা বলি, তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি না। ১৪ বছরেও সাগর রুনি হত্যার বিচার হয়নি। মেজর সিনহা হত্যার বিচার আমরা আজও বাস্তবায়ন করতে পারলাম না। প্রত্যাশা করেছিলাম, এ সরকার হয়তো কিছু করবে। এসব সংলাপে দাঁড়িয়ে আমরা যেসব কথা বলি, তা যারা বাস্তবায়িত করতে পারবে, এমন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া উচিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, আমরা বাক্স্বাধীনতার অধিকার পেয়েছি। তবে বাক্স্বাধীনতার নিরাপত্তা কতটুকু আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। অনেক সময় আমরা অনেক সত্য কথাও বলতে পারছি না। যারা বলছে, তাদের নানাভাবে বুলিং করা হচ্ছে, সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি, যা আমাদের ব্যথিত করেছে। শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের সামঞ্জস্যতা হচ্ছে না। দুর্নীতি ও জবাবদিহি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিপিডির আরেক সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট থেকে আমরা আজকের আলোচনাটা করেছি। এ আন্দোলন আমাদের বলে দিচ্ছে, আমরা যখন পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করি, তখন পরিবর্তন আমরা করতে পারি। একটা গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সামনে রেখে আমরা আলোচনাটা করছি। সুতরাং সামনের দিনেও আমাদের একটা আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ আমরা পেয়েছি। দুটিই কিন্তু আমাদের শক্তি। পরিবর্তন কিন্তু আমরা করতে পারি এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটা আকাঙ্ক্ষা আমাদের আছে। আমরা তা সামনে রেখে আগাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা একত্রিত হয়ে যে আলোচনাটা করলাম, তা আমাদের জন্য একটা বড় শক্তি, যা জাতীয় উত্তরণে বড় কাজে দেবে। এই আলাপ থেকে আমরা একটি ইশতেহার তৈরি করব। তা নিয়ে আমরা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে যাব। সম্মিলিতভাবে রাজনৈতিক নেতারা আমাদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেন। তাদের বাদ দিয়ে আমরা পরিবর্তন করতে পারব না। আজকের সংলাপে নাগরিকদের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা এবং সামর্থ্য দুটিই প্রকাশ পেয়েছে। সেটাকে ধরে ভবিষ্যতে আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে আরও ভালো করতে পারব।

এ ছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, আদিবাসী স্বীকৃতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সরকারি দপ্তরে ভোগান্তি কমানো, নারী অধিকার নিশ্চিতসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৯:৩৬   ৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


আল কোরআন ও আল হাদিস
আমি বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সময়মতো হবে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
১৩৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা গণফোরামের
কোনো অপশক্তি নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না : আইজিপি
কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কার অপরিহার্য : আখতার হোসেন
২০২৬ সালের ঈদুল ফিতরের তারিখ ঘোষণা
মাসুদুজ্জামানকে ঠেকাতে একমঞ্চে মনোনয়ন বঞ্চিতরা
নির্বাচিত হলে সিদ্ধিরগঞ্জে আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা মান্নানের
পর্যটন সার্ভিস হিসেবে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদ–এর উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা
প্লাস্টিকমুক্ত টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে অভ্যাস পরিবর্তন অপরিহার্য - পরিবেশ উপদেষ্টা

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ