এপস্টেইন ফাইলস প্রকাশের অনুমতি মার্কিন কংগ্রেসের

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » এপস্টেইন ফাইলস প্রকাশের অনুমতি মার্কিন কংগ্রেসের
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫



এপস্টেইন ফাইলস প্রকাশের অনুমতি মার্কিন কংগ্রেসের

যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত যৌন অপরাধী ও আর্থ লগ্নিকারী জেফরি এপস্টেইনের তদন্তের সব ফাইল প্রকাশের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ৪২৭-১ ভোটে এবং উচ্চকক্ষ সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে এ বিষয়ে একটি বিল পাস করেছে।

আল জাজিরা জানিয়েছে, বিলটি এখন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয়েছে। ট্রাম্প এটি স্বাক্ষর করলে তারপর ৩০ দিনের মধ্যে মার্কিন বিচার বিভাগকে এপস্টেইনের তদন্ত বিষয়ক সব নথিপত্র প্রকাশ করতে হবে।

এদিকে হোয়াইট হাউসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প তার ডেস্কে পৌঁছানোর সাথে সাথেই বিলটিতে স্বাক্ষর করবেন। স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে সিনেটের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর বিলটিতে তার স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় এপস্টেইন ফাইল প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর গড়িমসি শুরু করেন তিনি। অবশেষে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি নিজের অনেক সমর্থকের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে অবস্থান পরিবর্তন করে গত সপ্তাহে কংগ্রেসকে নথি প্রকাশের জন্য ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তার মাত্র কয়েকদিন পরই মার্কিন কংগ্রেস এই পদক্ষেপ নিলো।

২০ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার নথির মধ্যে কিছু জায়গায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এটি ঘিরে ট্রাম্প ও এপস্টেইনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আবারও শিরোনামে আসে। যদিও ট্রাম্প কোনো অন্যায় কাজ করেননি বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস।

প্রতিনিধি পরিষদে এপস্টেইনের ফাইল প্রকাশের বিষয়ে আপত্তি জানানো একমাত্র ব্যক্তি হলেন লুইজিয়ানার রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ক্লে হিগিন্স। এসব তথ্য প্রকাশের ফলে ‘নিরপরাধ মানুষদের আহত করা হচ্ছে’ বলেও উদ্বেগ জানান তিনি। অন্যদিকে এপস্টেইনের ফাইল প্রকাশে বারবার চাপ প্রয়োগ করার ঘটনাকে ‘ডেমোক্র্যাটদের প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন হাউজ স্পিকার মাইক জনসন।

অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে আইনটি কার্যকর হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এপস্টেইন এবং তার সহযোগী গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘সকল রেকর্ড, নথি, যোগাযোগ এবং তদন্তমূলক উপকরণ’ প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এপস্টাইনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অ্যানি ফার্মার বলেছেন, ফাইলগুলো গোপন রাখা ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসঘাতকতার শামিল’। ফার্মার বলেন, ‘যেহেতু এই অপরাধগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি, তাই আরো অনেক মেয়ে এবং নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

এপস্টেইন ফাইল কী?

‘এপস্টাইন ফাইলস’ শব্দটি কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প প্রশাসনকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কারণ দোষী সাব্যস্ত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের অপরাধের কারণে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ফেডারেল তদন্তে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে আরও স্বচ্ছতার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজস্ব সমর্থক এবং তার নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টির ভেতর থেকে চাপ তৈরি হচ্ছিল।

কয়েক সপ্তাহ ধরে এসব নথিপত্র প্রকাশের বিরোধিতা করার পর, ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং রিপাবলিকানদের এপস্টেইনের ফাইলগুলো জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত করার জন্য ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।

২০০৮ সালে ১৪ বছর বয়সি এক কিশোরীর বাবা-মা ফ্লোরিডায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করে যে, নিজের পাম বিচের বাড়িতে তাদের মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেছেন এপস্টেইন। এই ঘটনায় এপস্টেইন প্রসিকিউটরদের সঙ্গে একটি আপিল চুক্তিতে পৌঁছান।

তার পুরো বাড়ি জুড়ে মেয়েদের ছবি পাওয়া যায় এবং তাকে একজন নাবালিকাকে যৌনকর্মে প্ররোচনার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যার জন্য তাকে যৌন অপরাধী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। তবে প্রসিকিউটরদের সঙ্গে চুক্তির ফলে বড় ধরনের জেলের সাজা থেকে রক্ষা পায় এপস্টেইন।

এগারো বছর পর আবারো, তার বিরুদ্ধে যৌনতার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের একটি নেটওয়ার্ক চালানোর অভিযোগ আনা হয়। বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় তিনি কারাগারে মারা যান এবং তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে রায় দেয়া হয়।

এই দুটি ফৌজদারি তদন্তে বিপুল পরিমাণ নথিপত্র জড়ো করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের সাক্ষাৎকারের প্রতিলিপি এবং তার বিভিন্ন সম্পত্তিতে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা জিনিসপত্র।

তার ব্রিটিশ সহযোগী এবং প্রাক্তন বান্ধবী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধেও একটি পৃথক তদন্ত হয়েছিল, যাকে ২০২১ সালে এপস্টেইনের সঙ্গে যৌনতার জন্য মেয়েদের পাচারের ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের নাম মূলত সামনে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে।

অভিযোগ রয়েছে, ট্রাম্প ও এপস্টেইন সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, ২০০৮ সালে এপস্টেইন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি এপস্টেইনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

গত সপ্তাহে হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা তিনটি ইমেইল চেইন প্রকাশ করে, যার মধ্যে রয়েছে এপস্টেইন ও ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে আদানপ্রদান হওয়া চিঠিপত্র, যিনি বর্তমানে যৌন পাচারের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

এদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে ২০১১ সালে পাঠানো একটি ইমেলও রয়েছে, যেখানে এপস্টেইন ম্যাক্সওয়েলকে লিখেছিলেন: ‘আমি চাই তুমি বুঝতে পারো যে কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করেনি সে ট্রাম্প, (ভিক্টিম) তার সঙ্গে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছে।’

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস জানায়, ইমেইলে উল্লেখিত ভুক্তভোগী হলেন এপস্টেইনকে অভিযুক্ত করা ভার্জিনিয়া জিওফ্রে। মানসিক ট্রমা নিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আত্মহত্যা করা জিওফ্রে বলেছিলেন, তিনি কখনও ট্রাম্পকে কোনো নির্যাতনে অংশ নিতে দেখেননি এবং ইমেলগুলিতে ট্রাম্পের কোনো অন্যায়ের কোনো ইঙ্গিত নেই। ট্রাম্পও এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো অন্যায়ের কথা বারবার অস্বীকার করে আসছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৩:৫৭   ৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


এপস্টেইন ফাইলস প্রকাশের অনুমতি মার্কিন কংগ্রেসের
জাতিসংঘের গাজা ভোটকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন
মেলবোর্নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনীতে ১২ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ
৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিঙ্গাপুর থেকে আনা হবে এক কার্গো এলএনজি
রাখাইনে আরাকান আর্মির হামলায় ৩০ জান্তা সেনা নিহত
মেক্সিকোতে সামরিক হামলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
সৌদিতে বাস-ট্যাংকারের ভয়াবহ সংঘর্ষে, ৪২ ভারতীয় ওমরাহযাত্রী নিহত
৩২ দল পেল বিশ্বকাপের টিকিট, অপেক্ষা আরও ১৬ দলের
যুক্তরাষ্ট্র এখনও নারী প্রেসিডেন্টের জন্য প্রস্তুত নয়: মিশেল ওবামা
সুইডেনে প্রাণঘাতী বাস দুর্ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত নয় : পুলিশ

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ