বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

ব্যাংকের সব অসুখ প্রকাশ্যে আসছে: ড. দেবপ্রিয়

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ব্যাংকের সব অসুখ প্রকাশ্যে আসছে: ড. দেবপ্রিয়
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫



ব্যাংকের সব অসুখ প্রকাশ্যে আসছে: ড. দেবপ্রিয়

ব্যাংক খাতের লুকানো সব সংকট সামনে আসছে। ব্যাংকের শরীরে যে এত রোগ তা আগে জানা যায়নি। দীর্ঘদিন ঢেকে রাখা খেলাপি ঋণের পাহাড়, প্রভিশনের গর্ত আর তারল্য সংকট- সব অসুখ এখন একে একে প্রকাশ্যে আসছে। বৃহস্পতিবার ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ব্যাংক খাতের সর্বশেষ খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এমন মন্তব্য করেন।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক এবং ইআরএফের সাবেক সভাপতি শামসুল হক জাহিদ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক সচিব ও শিশু সাহিত্যিক ফারুক হোসেন।

বইটি প্রকাশ করেছে চন্দ্রাবতী একাডেমি। সম্পাদনা করেছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান। অনুষ্ঠানে তিনি স্বাগত বক্তব্য দেন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম সরকার সংস্কার ইস্যুতে রিলে রেসের মতো করে দৌড়াবে। আমরা দেখছি, তারা দৌড়াতে দৌড়াতে লাঠিটা ফেলে দিয়েছেন। এখন লাঠি ছাড়াই দৌড়াচ্ছেন। মিডিয়া সংস্কারসহ বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি খুব কম। অথচ মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগে চুক্তি করতে পেরেছে।’

তিনি মনে করেন, প্রকাশযোগ্য চুক্তির (এনডিএ) আড়ালে এমন সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতার ঘাটতি তৈরি হয়। অংশীজনের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা ছাড়া বড় সিদ্ধান্ত টেকে না। আগের সরকারের সময় যেসব বৈষম্যমূলক চুক্তি হয়েছে, সেগুলোর স্বচ্ছতা না থাকায় মানুষের সন্দেহ আরও বেড়েছে।

তিনি বলেন, এক জায়গায় সরকার কিছুই করলো না, আরেক জায়গায় ১৩ দিনের মধ্যে এত কিছু করে দেখালো। তার মানে সরকার চেষ্টা করলে পারে। তাহলে অন্য জায়গায় পারল না কেন, এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। তিনি মনে করেন, বন্দর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন দরকার।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশ অত্যন্ত দুর্বল । ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বহু বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ব্যাংক খাতের সমস্যার সমাধানে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করা, প্রশাসক নিয়োগ বা কিছু নিয়ম আগের অবস্থায় ফেরানো হয়েছে। এসবের বাইরে সুশাসন নিশ্চিত করতে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে – তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত সরকারকে চৌর্যবৃত্তিতে সহযোগিতা করেছে আমলাতন্ত্র। এর মধ্যে দুই-তিনজনকে যদি চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তখনকার প্রধান তাদের একজন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যখন সাংবাদিকদের ঢুকতে দিচ্ছিল না, তখন আমি ইআরএফের এই মিলনায়তনেদাঁড়িয়ে বলেছিলাম ‘ডালমে কুছ কালা হে। ঢুকতে না দেওয়ার বড় কারণ ছিল তারা স্বচ্ছতা চায়নি। তারা চায়নি সাংবাদিকরা সত্যটা জানুন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী সমাজের ভেতরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন অর্থনৈতিক সাংবাদিকেরা। রাজনৈতিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যে ঘাটতি হয়েছে তা পূরণ করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা। বেনামি ঋণের আলোচনা করতে গিয়েই এর পেছনের বড় বড় মানুষগুলোকে আবিষ্কার করা গেছে।
টাকা পাচারের প্রতিবেদন থেকেই জানা গেল পেছনের মানুষগুলো, তাদের রাজনৈতিক সংশ্লেষ এবং ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ।

নীতি সুদহার কমানো প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। এখন স্থিতিশীলতা থেকে প্রবৃদ্ধির দিকে যাওয়ার সময় হলেও জ্বালানি, গ্যাস, ও ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা—এসব বড় সংস্কার পিছিয়ে আছে। কেবল চাহিদা ব্যবস্থাপনা নয়, সরবরাহের দিকেও সমর্থন দরকার।

এক প্রশ্নের উত্তরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সম্প্রতি বড় ধরনের একটি ভূমিকম্পের ঘটনায় দেশব্যপী উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জাতীয় জীবনেও ভুমিকম্পের আশঙ্কা আছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকম্প যাতে না হয়, তার জন্য সজাগ থাকতে হবে।

শামসুল হক জাহিদ বলেন, অর্থনৈতিক সাংবাদিকরা গত কর্তৃত্ববাদী শাসন আমলে লুটপাটের বিরুদ্ধে লিখেছে। লুটপাটের নিউজ প্রকাশ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক সময় অর্থনৈতিক প্রতিবেদন বলতে কেবল বাজেটের আগে ও পরে কয়েকটা প্রতিবেদন হতো। এখন অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা অনেক এগিয়েছে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের পুঁজিবাজার ৫০ শতাংশ পতন হয়েছে। পুঁজিবাজার ইস্যুতে সরকারের অনেক উদ্যোগ গণমাধ্যমে রিপোর্টের কারণে নেওয়া হয়েছে।

ড. সাইফুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিকতা বিভাগে অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা কিছুটা উপেক্ষিত। ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ বইটি পুরোপুরি একাডেমিক, যা সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৭:৩১   ১৬ বার পঠিত