
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য জনসাধারণের কাছ থেকে অনুদান হিসাবে আসছে কোটি কোটি টাকা ।
৬ ডিসেম্বর স্থানীয় আইন প্রণেতা হুমায়ুন কবির মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় সবাই মুক্তহস্তে দানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়েই লোকজন টাকা দিতে শুরু করেন। এরই মধ্যে হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে আনা ১১টি ট্রাঙ্কে প্রচুর পরিমাণ টাকা পাওয়া গেছে। সেখানে এ অনুদান গণনার জন্য ৩০ জনকে নিযুক্ত করা হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্থান টাইমসের।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে মুর্শিদাবাদে প্রস্তাবিত এ বাবরি মসজিদ উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় অবস্থিত ষোড়শ শতাব্দীর মূল বাবরি মসজিদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ১৯৯২ সালে ঐতিহাসিক এ মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সভাস্থলে বহু মানুষ এসেছিলেন।
হুমায়ুন অনুষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে শাহী বিরিয়ানি খাওয়ানোর আয়োজন করেছিলেন। হুমায়ুন দাবি করেছেন, এই বাবরি মসজিদ তৈরি করতে ৩০০ কোটি টাকা লাগবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তিই নাকি এজন্য ৮০ কোটি টাকা অনুদান দেবেন বলে তাকে জানিয়েছেন। সে দিনই স্টেনলেস স্টিলের তৈরি ১১টি বড় দানবাক্স রাখা হয়েছিল সভাস্থলে। মসজিদ নির্মাণের জন্য হুমায়ুন আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। তারপর থেকে অনুদান এসেই চলেছে।
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত যারা নগদ অর্থ দান করেছেন, তা আলেম-উলামাদের উপস্থিতিতে গোনা শুরু হয়। ‘পশ্চিমবঙ্গ ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া’ সেই দানের অর্থ গণনায় সহায়তা করছে। টাকা গুনতে আনা হয়েছে মেশিনও। রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে দানবাক্সের নগদ গণনার কাজ শুরু হয়েছে। চলেছে রাত ১২টা পর্যন্ত। চারটি বাক্স এবং একটি বস্তা থেকে শুধু নগদে মিলেছে ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
এ ছাড়া, অনলাইন মাধ্যমে কিউআর কোড স্ক্যান করে অনেকে অনুদান দিয়েছেন। সেখানে এখন পর্যন্ত এসেছে ৯৩ লাখ টাকা। বাকি সাতটি দানবাক্সের গণনা শুরু হয়েছে সোমবার বিকাল ৫টা থেকে। রোববার যে ৩০ জন গণনার কাজ করছিলেন, তারাই সোমবারও গণনার দায়িত্ব পালন করছেন। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে টাকা গোনার প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
হুমায়ুনের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, অনুদানের অঙ্ক প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেছে। এমনকি, বিদেশ থেকেও অনুদান এসেছে। এই অর্থ সংরক্ষণের জন্য একটি আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হবে। তাতে সিসি ক্যামেরা এবং নিরাপত্তার অন্যান্য ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনে আরও কয়েক জনকে টাকা গোনার কাজে নিযুক্ত করা হতে পারে। এ বিষয়ে ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।
ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে আছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিজে কোটিপতি। তৃণমূল, ভারতীয় জনতা পার্টিসহ অনেক দলেই ছিলেন তিনি। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুমায়ুন কবিরের মোট সম্পদ ৩ কোটি ৭ লাখ ৪২ হাজার ৩০০ টাকা। এর মধ্যে ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩০ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। অন্যদিকে, স্থাবর সম্পত্তি ২ কোটি ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭০ টাকা। নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হলফনামায় হুমায়ুন জানিয়েছেন, তার কাছে একটি টাটা স্টর্ম সাফারি গাড়ি, ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের ৮০ গ্রাম সোনা আছে। এ ছাড়া তার কৃষি জমিও রয়েছে।
বাবরি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার বহরমপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার দিনই তাকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। তৃণমূল নেত্রীর সভায় এসে সেই সাসপেন্ডের ঘোষণা শুনে তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে ভোটারদের আপত্তির কারণেই সিদ্ধান্ত বদল করেছেন বলে জানিয়েছেন হুমায়ুন।
এদিকে বীরভূম, মালদায়ও ‘বাবরি’ মসজিদ তৈরির প্রস্তাব এসেছে বলে দাবি করছেন হুমায়ুন। এসব প্রস্তাবও বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন হুমায়ুন কবীর।
বাংলাদেশ সময়: ২০:১১:৪৪ ৮ বার পঠিত