রাজশাহীর তাহেরপুরে ৫৩৭ বছরের প্রাচীন মন্দিরে এবার পূজা হবে অষ্টধাতু দিয়ে নির্মিত প্রতিমায়। ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে সকল প্রতিমা। এই মন্দির থেকে ভারতবর্ষে শরৎকালে দুর্গোৎসব ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান এখানকার সনাতন ধর্মালম্বীরা।
সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে, রাজা কংস নারায়ণ রায় বাহাদুর প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে। ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দের ওই দুর্গোৎসবে তিনি ব্যয় করেছিলেন নয় লাখ এক টাকা। ৫৩৭ বছর পর এবার সেখানে দুর্গাপূজার জন্য প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয় করলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক।
কংস নারায়ণের রাজবাড়ীতে অবস্থিত মন্দিরটিতে তিনি অষ্টধাতুর একটি প্রতিমা তৈরি করে দিয়েছেন। এক টনের বেশি ওজনের এই প্রতিমাটি তৈরি করতে ২২ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিমাটি মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রতিমাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, ‘রাজা কংস নারায়ণের শারদীয় দূর্গাপূজার প্রকৃত ইতিহাস যুগ-যুগান্তর ধরে যেন মানুষ স্মরণ করে সে উদ্দেশ্যে অষ্টধাতু দিয়ে ব্রোঞ্জের প্রতিমাটি আমি নিজ উদ্যোগেই তৈরি করে দিয়েছি। প্রতিমাটির কারণে প্রাচীন এই মন্দিরটি আরও সমৃদ্ধ হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্দিরের কিছু সংস্কার কাজও করা হচ্ছে। সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ হলে এটা সনাতন ধর্মাবম্বলীদের কাছে একটা তীর্থস্থানে পরিণত হতে পারে। মন্দিরটির উন্নয়নে আমি সব সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে আছি।’
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১ হাজার ৫০০ শতকের প্রথম দিকে কামদেব ভট্ট তাহেরপুরে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা হন কংস নারায়ণ। তিনি নিজেকে বিখ্যাত করার জন্য অশ্বমেধযজ্ঞ করার ঘোষণা দেন। তখন রাজপতি রমেশ শাস্ত্রী রাজাকে অকালবোধনের মাধ্যমে অসময়ে দুর্গাপূজা আয়োজনের পরামর্শ দেন।
রাবণকে বধ করার জন্য রামের অকালবোধনের মাধ্যমে শরৎকালে দুর্গাপূজার বর্ণনা শুনে রাজা কংস নারায়ণও তা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলা ৮৮৭ সালের আশ্বিন মাসের মহাষষ্ঠী তিথিতে অকালবোধনের মাধ্যমে কংস নারায়ণ দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়ে প্রথম দুর্গাপূজা করেন।
এরপর থেকেই শরৎকালের দুর্গাপূজা ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতবর্ষে। কালের পরিক্রমায় এখন আরও জাকজমকভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
রাজা কংস নারায়ণ তাহেরপুরে পাশাপাশি চারটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এগুলো হলো- গোবিন্দ মন্দির, শিব মন্দির, দূর্গা মাতা মন্দির এবং কালিমন্দির।
রাজার বংশধররা ভারতে চলে গেলে ১৯৬৭ সালে রাজবাড়িসহ সব জমি লিজ নিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয় তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ। ২০১৩ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্দিরটি খুলে দিতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। রাজার নির্মিত সেই চার মন্দিরে এখনও পূজা অর্চনা হচ্ছে।
মন্দির কমিটির সদস্য বিজয় চন্দ্র ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘তাহেরপুর থেকেই দুর্গাপূজার বিস্তৃতি লাভ করে। তাই আমরা প্রথম দুর্গামন্দির হিসেবে তাহেরপুরের এই মন্দিরকে জাতীয় দুর্গামন্দির ও তীর্থস্থান হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছি।’
‘সরকার পদক্ষেপ নিলে এই স্থানটি দেবী দুর্গার প্রথম আবির্ভাবস্থল হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তখন এটি বাংলাদেশের জন্যই গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।’
পূজা উৎযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘মন্দিরটিকে জাতীয় দূর্গামন্দির হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আমাদের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি মন্দিরটিতে ব্রোঞ্জের তৈরি প্রতিমা দিয়েছেন। এটা সারাবছরই মন্দিরে থেকে মন্দিরকে সমৃদ্ধ করবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৪:২৯ ৪১৪ বার পঠিত