সাভারের আশুলিয়ায় গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ একই পরিবারের পাঁচজনের মধ্যে একজন মারা গেছেন। একজন কিছুটা সুস্থ হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অন্য তিনজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনেরা।
এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অগ্নিদগ্ধ ওই পরিবারের গৃহবধূ রিপার (২০) শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও শনিবার ভোরে মারা গেছেন তার শাশুড়ি হাসিনা (৪০)। গৃহকর্তা আরব আলী তরফদার (৫০), তার ছেলে আব্দুর রউফ (২৫) এবং দেড় বছর বয়সী নাতনি আয়েশার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
একদিকে মৃত্যু আর অপরদিকে হাসপাতালে ভর্তি মৃত্যু পথযাত্রীদের চিকিৎসা ব্যয় জোগাড় করতে ছুটোছুটি করছেন স্বজনরা। তবে এখন পর্যন্ত অসহায় পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা দেননি, এমনকি খোঁজ পর্যন্ত নেননি উপজেলা প্রশাসনের কেউই।
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে জামগড়ার মানিকগঞ্জপাড়া এলাকার কবরস্থান রোডে আব্দুল হামিদের মালিকানাধীন দুইতলা ভবনের নিচতলায় গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন পরিবারটির সবাই।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে মারা যাওয়া হাসিনার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। হাসিনার স্বামী আরব আলী তরফদার ও ছেলে আব্দুর রউফের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং শিশু আয়েশার ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তবে শিশুটির মা রিপা সুস্থ আছেন।
অগ্নিদগ্ধ আরব আলীর স্বজন রিকশাচালক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকেই মামাশ্¦শুর আরব আলীর পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন তিনি ও তার স্ত্রী সালমা। চিকিৎসক-নার্সদের কথামত ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। টাকা জোগাড় করতে হাত পাতছেন নিকটাত্মীয় ও শুভাকাঙ্খীদের কাছে। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালের বিল ৬০ হাজার টাকার কথা তাদের জানানো হয়েছে। এত টাকা কোথায় পাবেন সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি।
ভাতিজা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমার চাচা আরব আলী দরিদ্র ভাঙারি ব্যবসায়ী। চাচাতো ভাই রউফ ও তার মা মৃত হাসিনা স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে কম বেতনের শ্রমিক। আর রউফের স্ত্রী গৃহিণী। সবার আয়ের টাকা দিয়েই চলত পরিবার। কিন্তু এই দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারটি তছনছ হয়ে গেল।’
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহতের পরিবারের পক্ষে শাহিন আলম আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় জামগড়া এলাকায় অবৈধভাবে নেওয়া তিতাস গ্যাসের সংযোগে ব্যবহৃত নিম্নমানের গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে অগ্নিকাÐে একই পরিবারের পাঁচ সদস্য দগ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ জানান, মামলার পর বাড়ির মালিক আব্দুল হালিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পারা পরিবারটির খোঁজ নেয়া ও আর্থিক সহায়তার ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৩:২৩ ২৪১ বার পঠিত