দেশের দীর্ঘ মানব জিন্নাত আলীর মস্তিষ্কে একটি জটিল টিউমার হয়েছে। তার এই ব্যাধি সাড়াতে সার্জারি লাগবে। এটি একটু জটিল সার্জারি। আগে দেশের বাইরে এই অপারেশন করা লাগলেও এখন বাংলাদেশেই তা সম্ভব। জিন্নাত আলী রাজি থাকলে আগামী সপ্তাহেই এই সার্জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান এন্ডোক্রাইওনলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন। অতিরিক্ত দৈহিক উচ্চতায় আক্রান্ত রোগীর বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক ডা. ফরিদ বলেন, ‘জিন্নাত আলীর বর্তমান বয়স ২২ বছর। তিনি তার ১২ বছর বয়স পর্যন্ত অন্যান্য বাচ্চাদের মতোই বেড়ে উঠেন। কিন্তু ১২ বছর বয়সে তার বাবা-মা খেয়াল করেন যে, তার সমবয়সী বাচ্চাদের, এমনকি তার বড় ভাই বোনের তুলনায় তিনি লম্বা হয়ে উঠছেন। এই সমস্যা নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে গেলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।’
‘আজ থেকে পাঁচ বছর আগে জিন্নাত আলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনলজি বিভাগে ভর্তি হন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষার পরে তার মস্তিষ্কে এক ধরনের টিউমার ধরা পড়ে। যা তার অস্বভাবিক লম্বা হওয়ার কারণ।’
চিকিৎসক বলেন, কিন্তু জিন্নাত আলী নার্ভাস হয়ে অপারেশন করতে অস্বীকৃতি জানান এবং হাসপাতাল থেকে চলে যান। ওই সময়ে চলে যাওয়ায় তার কোনো কাগজপত্র আমরা হাতে পাইনি। তাই আমরা কোনো তথ্য দিতে পারছি না। ইতিমধ্যে তার সমস্যা বিভিন্ন পরিসরে বাড়তে থাকে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর জিন্নাত আলী ডান পায়ে ব্যথা ও ফেলা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানকার চিকিৎসক তার পায়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। এতে তার আংশিক উন্নতি হয়। ইতিমধ্যে বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নজরে এলে তাকে বিনামূল্যে চিকিৎসার আশ্বাস দেওয়া হয়।
ডা. ফরিদ বলেন, পরে ২২ সেপ্টেম্বর তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ৪০০৪/এ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়। আমরা তার রোগের বৃত্তান্ত শুনি এবং শারীরিক পরীক্ষা করি। ইতোমধ্যে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে তার বিভিন্ন সমস্যা ধরা পড়ে ডায়বেটিস, ডিসলিপিডিমিয়া অস্টিওআথ্রাইটিস এবং সেলুলেটিস অব রাইট লেগ। তার মূল সমস্যা মস্তিষ্কে টিউমার।
চিকিৎসক বলেন, এই রোগের প্রধান চিকিৎসা সার্জারি। এটা একটি জটিল টিউমার, আমরা তাকে সেই চিকিৎসা দেব। আমাদের এখানকার ডায়বেটিস ও হরমন বিভাগ এবং অন্য বিভাগের সঙ্গে হাতে হাত রেখে সুচিকিৎসা দিয়ে আসছে। আগে আমাদের এই সার্জারি করার জন্য বিদেশে যেতে হতো। কারণ উপমহাদেশে এই চিকিৎসা ছিল না। বাইরে যেতে হতো। এখন বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যারা হরমোনের জন্য লম্বা মোটা চিকন হচ্ছে তাদের প্রত্যেকেরই চিকিৎসা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- উপাচার্য কনক কান্তি বড়–য়া, উপ-উপাচার্য ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সিকদার, পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন, নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন এবং এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৪:০৯ ১৯১ বার পঠিত