নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে বলে আশংকা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা যেভাবে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে তা আরো চরম আকার ধারণ করতে পারে।
সম্প্রতি সাংসদ শামীম ওসমান একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জকে যারাই অশান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন। কিন্তু তিনি এখনও মাঠে নামেননি।
অপর দিকে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কোন্দল লোক দেখানো কিছুটা নিরসন হলেও পরবর্তীতে চাঙ্গা হয়ে উঠতে শুরু করেছে। একই সাথে আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নামতে শুরু করেছে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
ইতিমধ্যে তাদের কেউ প্রার্থীতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদেশও ভ্রমণ করে এসেছেন। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কর্মীবান্ধব হিসেবে পরিচিত সাংসদ শামীম ওসমান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত নিশ্চুপ থাকার পর এবার মাঠে নেমে পুন:রায় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের একত্রিত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ট সূত্রে জানাগেছে।
পাশাপাশি গত রমজানে বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংসদ শামীম ওসমান প্রতিপক্ষের চাইতে নিজ অনুসারিদের বিরুদ্ধে বাস্তব চিত্র তুলে ধরার পর নেতাকর্মীদের মাঝে শামীম ওসমানের ইমেজ আরো বেড়েছে।
অপর দিকে, বিএনপিতে দলীয় কোন্দল বেশ পুরানোই বলে চলে। সম্প্রতি আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপির বিভক্তি এখন অনেকটাই প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
ইতিমধ্যে আইনজীবী ফোরামে পদত্যাগ আর পাল্টা কমিটি গঠনই এর বিরোধ আরও জোড়ালো হয়েছে। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৈমূর ও বর্তমান সভাপতি কাজী মনিরের স্বমর্থকদের মধ্যে বিরোধ এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে।
তৈমূর আলম দলীয় পদ না পেয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে এখন দলছুট অবস্থায় রয়েছেন। তার কিছু অনুসারি রয়েছে যারা তৈমূরকে নিয়ে রাজনীতি করেছেন তাদের অনেকে সাবেক এমপি কালাম গ্রুপে এসে যোগ দিয়েছেন।
এছাড়াও আইনজীবী ফোরামের পাল্টা কমিটি গঠন ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর দুই কোটি টাকার তত্বের পর বিএনপির প্রবীণ নেতা আব্দুল মজিদের তিন কোটি টাকার তত্ব বিএনপির ইমেজ এতটাই নিচে নামিয়েছে যা খোদ দলের অনেকের মুখে মুখে এখনও তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে।
অপরদিকে এমপি সেলিম ওসমান বন্দরের একটি স্কুলে ঘোষনা দেন তিনি জনগণের আস্থা অর্জন না করতে পারলে নির্বাচন করবেন না। এতে করে নারায়ণগঞ্জ জাতীয়পার্টির মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে।
নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর জাতীয়পার্টি অভিবাবকহীনতায় ভুগছিলেন তা সেলিম ওসমান জাতীয়পার্টিতে যোগ দিয়ে এ শূন্যতা পূরন করেন। কিন্তু সেলিম ওসমানের নির্বাচন না করার ঘোষণায় দলীয় নেতা-কর্মীদের হতাশার সৃষ্টি করেছে।
দলের অনেক নেতাই বলেন, সেলিম ওসমান জাতীয়পার্টি থেকে নির্বাচন না করলে আগামীতে নারায়ণগঞ্জে জাতীয়পার্টি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এমনটাই ধারণা করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
জাপা নেতা-কর্মীদের দাবি নাসিম ওসমানের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় তারা সেলিম ওসমানের সাথে রাজনীতি করছেন। সেলিম ওসমান দলের হাল ছেড়ে দিলে নারায়ণগঞ্জে জাতীয়পার্টির ইমেজ নষ্টের পাশাপাশি এর অস্তিত্ব হারাবে।
সব মিলিয়ে একদিকে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে কোন্দল যেমন প্রকাশ্যে রূপ নিতে পারে, তেমনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দুই দলের মধ্যে অভ্যন্তরিন বিভেদ চরম আকার ধারণ করছে এবং অস্তিত্ব হারানোর ভয়ে ভুগছে জাতীয়পার্টি। এমনটাই মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০৯:১৪ ৪০১ বার পঠিত