জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, আগামী বছর ১৫ জানুয়ারি থেকে জেলায় ইরি-বোরো চাষ শুরু করা হবে। এ লক্ষ্যে জেলায় আমন ধান কর্তনের পর কৃষকদের ইরি-বোরো চাষে জমি প্রস্তুত করতে মাঠকর্মীদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে জেলার ১৩টি উপজেলাতে ইরি-বোরো চাষের জন্য ধানের বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ইরি-বোরো ধান চাষের বীজতলা প্রস্তুত সম্পন্ন করতে কৃষকদের বীজ সরবরাহের কাজ সরকারী বিএডিসি এবং ব্যক্তি মালিকানা ও এনজিওদের সরবরাহ বীজ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এবারে কৃষি অধিদপ্তর জেলায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল উৎপাদন নির্ধারণ করা হয় ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৯৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। বোরো চাষে ফলন হয়েছিল ৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন চাল।
সুত্রটি জানায়, ধানের জেলা হিসেবে পরিচিত এ অঞ্চলে অনুকুল আবহাওয়া ও কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বোরো চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ, সেচ কাজে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, সার, কীটনাশক ও ডিজেল সরবরাহ সঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন অর্জিত করা সম্ভব হবে। এবারে প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না থাকলে জেলায় বাম্পার বোরো উৎপাদন হলে চাল উৎপাদন হবে ৭ লক্ষ মেট্রিক টনের অধিক। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, এবারে জেলায় ভালো ফলনের জন্য হাইব্রিড জাতের অধিক ফলনশীল ধানের ভ্যারাইটি এসিআই, আফতার, জিরা, জাগরণ, এরাইস, টিয়া ও নীলসাগর ধানের চারা রোপণ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ ভ্যারাইটির ধান প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন থেকে ৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন উৎপাদন করা সম্ভব হবে। দেশী উফশী জাতীয় ধানের মধ্যে ব্রি-২৮, ২৯, ৫৮, ৪৫, ৫৫, বিআর-১৬ ও কোটরা পারি ধানের ফলন বেশি ও বালাইমুক্ত হওয়ায় কৃষকদের এই ধানের বীজ রোপনে উদ্বুদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব দেশী উফশী জাতীয় ধান প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন থেকে ৪ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন অর্জিত হয়। এবারে হাইব্রিড ও উফশী উন্নত জাতের এসব বোরো ধানের চারা রোপণ বেশি করতে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর কাজ চলছে।
দিনাজপুর বিআরডিবি সার বিভাগের উপ-পরিচালক দিদার হোসেন জানান, জেলায় বোরো চাষে কৃষকদের পর্যাপ্ত সার সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। চলতি বছর বোরো চাষের ১৩ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ১ হাজার ৭৫৯ মেট্রিক টন টিএসপি, ১ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন ড্যাব ও ২ হাজার ১৯ মেট্রিক টন এমওপি রাসায়নিক সার চাহিদা রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে দ্বিগুন পরিমাণ সার বিআরডিবির গুদামে মজুদ রয়েছে। জেলার ১২৬ জন রাসায়নিক সার ডিলার ও ৩৭৮ জন সাব ডিলারের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে সার বিক্রির সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কৃষকেরা সহজে সার ক্রয় করে বোরো চাষে ব্যবহার করছেন।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের যান্ত্রিক বিভাগের সহকারী পরিচালক ইকবাল হাসান জানান, জেলায় কৃষি কাজে ব্যবহার্য বিদ্যুৎ চালিত ২ হাজার ৮৫৭টি গভীর ডিপ টিউবওয়েল, ১৩ হাজার ৪৬৬টি বিদ্যুৎ চালিত অগভীর ডিপ টিউবওয়েল, ৬২ হাজার ৬৬৯টি ডিজেল চালিত ডিপ টিউবওয়েল ও ৩৮৬টি ললিত পাওয়ার পাম্প বোরো চাষের সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য চালু রয়েছে। বোরো মৌসুমে চেক কাজে ব্যবহারের জন্য যন্ত্রগুলো যাতে স্বাভাবিক থাকে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে দিনাজপুর অঞ্চলে ২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে তৎপর রাখা হবে। সব মিলিয়ে জেলায় এ মৌসুমে ইরি-বোরো চাষে উৎপাদন সফল করতে কৃষি অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৩:৫৬ ৫৩১ বার পঠিত