
নিউজটুনারায়ণগঞ্জঃ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর তথা
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক
সমাজ প্রতিষ্ঠা। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই
শিক্ষা নিয়েছিলেন যে, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে
প্রয়োজন শক্তিশালী, স্বাধীন ও জনগণের আস্থাশীল বিচার বিভাগ। বঙ্গবন্ধু তাঁর
জীবনের পদে পদে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হলেও তিনি
কখনো বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারাননি।
আজ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। সুপ্রিম কোট জাজেস
স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সভায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদের লিখিত বক্তব্য
পড়ে শোনান হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর আস্থা, পরম
শ্রদ্ধা। বিচার বিভাগের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ থেকেই তিনি
বাংলাদেশ সংবিধানে বিচার বিভাগকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে গেছেন।
তিনি ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম
কোর্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই বছরে ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম
কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি বলেন, আজ আমাদের স্বীকার করতেই হবে, ৪৭
বছরের পথচলায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুপ্রীম কোর্টের বহু উল্লেখযোগ্য
অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, ১৯৭১-এর মানবতা বিরোধী
অপরাধ ও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল মামলার বিচারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের
অবদান ভোলার নয়। দেশে বিচারহীনতার যে সংষ্কৃতি তৈরি হয়েছিলো তা থেকে
বাঙালি জাতিকে কলংকমুক্ত করতে এসব হত্যাকা-ের বিচারের কথা জাতি চিরকাল
স্মরণ রাখবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি আজকের বিচার বিভাগ
সম্পূর্ণ স্বাধীন কিন্তু আজকের অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য যে কঠিন সংগ্রাম
করতে হয়েছে তা স্মরণ না করলে ভবিষ্যত পথচলায় ভ্রান্তি হতে পারে। তিনি বলেন,
আমাদের স্মরণ রাখতে হবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
সপরিবারে হত্যা করার পর ২১ বছর একটি মামলা পর্যন্ত রুজু হয়নি। বরঞ্চ এই
হত্যাকান্ডের বিচার যাতে না হয় সেই জন্য একটি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স
জারি করা হয়। এ ব্যাপারে তখনকার সুপ্রীম কোর্টে কোনো দিয়েও এই কালা কানুনগুলোকে ইতিহাসের
আঁস্তাকুড়ে ফেলার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ১৯৮২ সালে আমরা দেখেছি
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিকে মার্শাল-‘ল’ ফরমান দ্বারা এজলাসে বসা
অবস্থায় চাকুরিচ্যুত করতে। আমারা আরো দেখেছি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার
করতে হাইকোর্টের ৭ জন বিচারপতি বিব্রতবোধ করেছেন। তারপরও এসব
অন্যায়কে পিছনে ফেলে আজকের সুপ্রীম কোর্ট একটি সুদৃঢ় অবস্থানে।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ ও স্বাধীন বিচার বিভাগকে আনুষ্ঠানিক
রূপ দেওয়া হয় ১ নভেম্বর ২০০৭ সালে। তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার বিভাগের এই স্বাধীনতা এবং পৃথকীকরণকে
সুদৃঢ়, দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই করার জন্য বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ
করেছেন। যার সুফল আমরা পেতে শুরু করেছি।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে
অন্যান্যের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা
হোসেইন হায়দার, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের
ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও সুপ্রিম কোর্ট
আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৬:০৯ ২০৫ বার পঠিত