আলিসের হ্যাটট্রিকে দুর্দান্ত জয়ে পেয়েছে জয় ঢাকা ডায়নামাইটস। এদিন টস জিতে ফিল্ডিংয়ের নিদ্ধান্ত নেন রংপুর রাইডার্সের দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৩ রান করেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩ রানে হেরে যায় রংপুর রাইডার্স। ব্যাপক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে এবারের আসরে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন ঢাকা ডায়নামাইটসের স্পিনার আলিস ইসলাম।
১৮৪ রানের বড় টার্গেটে মাঠে নেমে রংপুরের ওপেনার ক্রিস গেইল ও মেহেদি মারুফের শুরুটা হয় খুবই ধীর গতির। একটি ছক্কা হাঁকালেও ৮ বলেই ফেরেন তিনি। শুভগত হোমের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে এলবির আবেদন করেন গেইলের বিরুদ্ধে। কিন্তু গেইল রিভিউ নিয়ে বসেন। তৃতীয় আম্পায়ার দেখে-শুনে-বুঝে নট আউট ঘোষণা করেন গেইলকে। পরের বলেই হাঁকিয়ে বসেন সজোরে। কিন্তু দুর্ভাগ্যই বলতে হবে এই ইউনিভার্সাল বসের। আন্দ্রে রাসেল ও পোলার্ডের যৌথ প্রচেষ্টার এক দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরতে হয় তাকে।
সীমানয় দাঁড়ানো রাসেল বলটি ধরে ফেলেন ঠিকই কিন্তু নিজেকে সামলাতে না পেরে সীমানার বাইরে পড়ে যান। তবে পড়ে যাওয়ার আগে বলটি শূন্যে ছুড়ে দেন যা লুফে নেন পোলার্ড। ৯ বলে ৮ রান করেই ফিরতে হয় গেইলকে। তার ফেরার পরের ওভারেই ১০ বলে ১০ রান করে বিদায় নেন আরেক ওপেনার মারুফ। রাসেলের বলে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তবে রানের চাকা দারুণভাবে সচল রাখেন রাইলি রুশো ও মোহাম্মদ মিঠুন। সুনীল নারাইনের করা এক ওভারেই দুজনে নিয়ে নেন ২২ রান।
এরপর দলকে টেনে নিয়ে যান ১৪৩ রানে। ঢাকার বোলারদের তুলোধুনো করে দ্রুতই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। কিন্তু সেঞ্চুরি করা হয়নি তার। দুর্ভাগ্যজনকভাবেই স্ট্যাম্পিং হয়ে ফেরেন তিনি। ভাঙ্গে ১২১ রানের জুটি। ৪৪ বলে ৮৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন রুশো। রবি বোপারা অবশ্য টিকতে পারলেন না বেশি সময়। ৪ বলে ৩ রান করে ঢাকা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বলে ফেরেন তিনি।
রুশোর সঙ্গে মিলে দারণভাবে ব্যাট চালান মিঠুনও। তবে হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতেই আলিস ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা খেলতে পারলেন মাত্র এক বল। আলিসের বলে শূন্য রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনিও। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিপিএল ষষ্ঠ আসরের প্রথম হ্যাটট্রিকের মালিক হয়ে গেলেন আলিস। মিঠুন, মাশরাফির পর ফরহাদ রেজাকেও ফেরান এই অফস্পিনার। এই ধ্বসের পর আর কোনোভাবেই ম্যাচে ফিরতে পারেনি রংপুর। শেষের দিকে হাওয়েলের ৮ বলে ১৩ রান কিছুটা জয়ের আশা দেখালেও, নারাইনের বল বোল্ড হয়ে ফেরার পর তা আর সম্ভব হয়নি। ৯ রানে শফিউল ইসলাম আর ১ রানে নাজমুল ইসলাম অপু অপরাজিত থাকেন।
ঢাকার হয়ে হ্যাটট্রিক করা আলিস নেন ৪ উইকেট। এছাড়া দুই উইকেট নেন নারাইন। একটি করে উইকেট নেন সাকিব, রাসেল ও হোম।
এর আগে কাইরন পোলার্ডের ঝড়ো অর্ধশতকে ভর করে রংপুরকে ১৮৪ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে ঢাকা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৯ রানের মাথায় সোহাগ গাজীর বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান হজরতউল্লাহ জাজাই। ব্যক্তিগত ৯ রানে মাশরাফির বলে রবি বোপারার হাতে ধরা পড়ে ফিরে যান সুনীল নারিনও। ৮ বলে ১৮ রান করে সোহাগ গাজীর দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন রনি তালুকদার। তারপর দলীয় ৬৪ রানের মাথায় ফিরে যান মিজানুর রহমান (১৫)।
৫ম উইকেটের জুটিতে কাইরন পোলার্ডের সাথে ৭৮ রান সংগ্রহ করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। পোলার্ডের ৬২ রানের ঝড়ো ইনিংসে ফ্রন্টফুটে ফিরে আসে ঢাকা। ১৪২ রানের মাথায় ফিরে যান পোলার্ড। পরের ওভারেই ভুল শট খেলে ফরহাদ রেজার বলে মোহাম্মদ মিঠুনের তালুবন্দী হয়ে ৩৬ রানে ফিরে যান অধিনায়ক সাকিব। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রান তোলে ঢাকা। রংপুরের পক্ষে শফিউল ইসলাম ৩টি এবং সোহাগ গাজী ও হাওয়েল ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ঢাকা ডায়নাইমাটস: ২০ ওভারে ১৮৩/৯ (জাজাই ১, নারাইন ৮, রনি ১৮, সাকিব ৩৬, মিজানুর ১৫, পোলার্ড ৬২, রাসেল ২৩, শুভাগত ৩, সোহান ৪, রুবেল ১*; মাশরাফি ৪-০-২২-১, সোহাগ ৩-০-২৮-২, শফিউল ৪-০-৩৫-৩, অপু ২-০-৩৪-০, রেজা ৩-০-৩২-১, হাওয়েল ৪-০-২৫-২)।
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৮১/৯ (মারুফ ১০, গেইল ৮, রুশো ৮৩, মিঠুন ৪৯, বোপারা ৩, হাওয়েল ১৩, মাশরাফি ০, ফরহাদ ০, সোহাগ ০, শফিউল ১০*, নাজমুল ১*; রাসেল ৩-০-২৬-১, রুবেল ৩-০-২৬-০, শুভাগত ২-০-২৭-১, সাকিব ৪-০-৩৫-১, নারাইন ৪-০-৪০-২, আল ইসলাম ৪-০-২৬-৪)।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৩:৪৫ ১৯২ বার পঠিত