
মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনারা কে কী করছেন, সব খবর আমি রাখব। আমার মনিটরিংয়ের বাইরে কেউ থাকবেন না। মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পেয়ে বিত্তবৈভবের পেছনে ছুটলে অনেক করতে পারবেন। কিন্তু সেটা করতে গেলে পচে যাবেন। গতকাল সোমবার নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে খবরটি জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিশাল বিজয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করলে বাদ পড়েন গত দুই মেয়াদের অনেক প্রভাবশালী সদস্য। এবারের মন্ত্রিসভায় ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ উপমন্ত্রীর মধ্যে ২৭ জন প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে মন্ত্রিসভায় নতুনদের জায়গা দেওয়া হয়েছে, তা প্রমাণে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আগের মন্ত্রিসভার অনেক বড় পরিবর্তন এনে
নতুন মন্ত্রিসভা করেছি। এর আগে কোনো মন্ত্রিসভায় এত বড় পরিবর্তন আসেনি, কেউ এত বড় পরিবর্তন করেনি। আমি নতুনদের মন্ত্রিসভায় এনেছি। আপনাদের ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে মন্ত্রিসভায় এনেছি, আশা করি সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে প্রমাণ করবেন যে আপনাদের ওপর আমার আস্থা ও বিশ্বাস সঠিক ছিল।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, নতুনদের দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য অনেকে নানা কথা বলবে। কোনো কিছু ঘটলেই শুনতে হবে, অনভিজ্ঞদের নিয়ে আসার কারণে এটা হয়েছে। এ কারণে আপনারা সততা রেখে চলবেন। যে কাজই করেন না কেন, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে করবেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ সময় জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে তার দাদার কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছেন- আমার দাদা তার ছেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, ‘যে কাজই কর না কেন সিনসিয়ারিটি অব পারপাস অ্যান্ড অনেস্টি অব পারপাস।’ আমি মনে করি, এ দুটি কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ নতুন মন্ত্রিপরিষদ যে কাজই করবে, এ দুটি কথা মনে রাখতে হবে।
বৈঠকে প্রায় সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী তাদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। বৈঠকের প্রথম এজেন্ডা হিসেবে সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আজ আমাদের মাঝে নেই, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আশরাফকে ছোটবেলা থেকেই আমি চিনি, কামালের (প্রধানমন্ত্রীর ভাই শেখ কামাল) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ করতেন। আমাদের মধ্যে একটা পারিবারিক সম্পর্কের মতোই ছিল।
প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে এ সময় বলেন, আওয়ামী লীগ তো একটা পরিবারের মতো। সবার সঙ্গেই আশরাফের আলাদা একটা যোগাযোগ ছিল। ’৭৫-এর পর ১৯৮০ সালে যখন আমি লন্ডনে যাই, তখন আমাদের একসঙ্গে কাজ করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগ সংগঠন করার সুযোগ হয়েছিল। তার পর তিনি সেখানেই ছিলেন। রেহানাও ছিল। রেহানার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখেই তিনি এ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে কাজ করতেন। এর পর তাকে আমি বাংলাদেশে নিয়ে আসি। বারবার তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এবারও তিনি অসুস্থ অবস্থায় তার অবর্তমানে কিশোরগঞ্জবাসী তাকে বিপুল পরিমাণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যেদিন আমরা শপথ নিলাম, সেদিনই মারা যান। তিনি শপথ নিতে পারেননি। কিন্তু গেজেটে তার নাম আসে।
বৈঠকে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জন্য শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর পর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের জন্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুমোদন হয়। এ ছাড়াও সাতটি আলোচ্যসূচি ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০২:৩৬ ২৫৫ বার পঠিত