
কালিজিরা বা কালিজিরার তেলের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। কালিজিরার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। তবে বর্তমানে পুষ্টিকর বলে বাজারে যে কালিজিরার তেল বিক্রি হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশিই ক্ষতিকর। কালিজিরার তেল নিয়ে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরীক্ষার ফলাফলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
যেখানে-সেখানে নামে-বেনামে যেসব কালিজিরার তেল পাওয়া যাচ্ছে তা না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এ তেল খেলে পেটের পীড়া বাড়বে। তা ছাড়া সরাসরি তেল সেবনে বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাস্ট্রিক, আলসার এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সঠিক গুণগত মানের কালিজিরার তেল শরীরের জন্য উপকারী।
উপকারী এই তেলের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানকে অধিভুক্ত করে পূর্ণাভা লিমিটেড নামে একটি দেশীয় কোম্পানি বাজারে আনতে যাচ্ছে কালিজিরা তেলের এন্টেরিক কোটেড সফট জিলাটিন ক্যাপসুল, যা দেবে ১০০% বিশুদ্ধ কোল্ড প্রেসড প্রাকৃতিক কালিজিরা তেলের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা। এই ক্যাপসুল সেবনে কালিজিরা তেলের সব উপকারিতা। গবেষণায় জানা যায়, কালিজিরার তেল মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এটি শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল যেমন-কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (এলডিএল), ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) কমিয়ে আনে এবং একই সঙ্গে উপকারী উচ্চ ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে বলে শরীরে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
শরীরের অতিরিক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়িয়ে শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।
থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নামিয়ে আনে বলে হাইপার থাইরয়েডিজমে উপকারী।
ক্রিয়েটিনিন হ্রাস করে কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে সহকারী।
এমনকি পুরুষের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করতেও এটি বেশ কার্যকরী।
কালিজিরা তেলে এতসব উপকারের রহস্য কিন্তু এর ভেতরেই নিহিত রয়েছে। কারণ এতে আছে ১০০টিরও বেশি উপাদান। এতে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ, ৩৮ শতাংশ শর্করা এবং ৩৫ শতাংশ ভেষজ তেল ও চর্বি বিদ্যমান। কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আছে নাইজেলোন, থাইমোকুইনোন ও মিক্সড অয়েল। এতে আরও আছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডসহ নানা উপাদান।
পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে লিনোলেইক অ্যাসিড, ওলেইক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি। এর মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেড ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান। এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাবসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।
এসব উপকার পাবেন কেবল সঠিক ও গুণগত মানের কালিজিরার তেল ব্যবহার ও সেবনে। যদি ভেজাল কালিজিরার তেল ব্যবহার ও সেবন করেন তবে উপকার তো হবেই না বরং অপকারের সম্ভাবনা অনেক। তাই বাজারে যেখানে-সেখানে নামে-বেনামে যেসব কালিজিরার তেল পাওয়া যায় তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
আমাদের আধুনিক ডাক্তারিশাস্ত্র আর ধর্মীয় অনুভূতি যাই বলি না কেন, কালিজিরা সবখানে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালিজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসেবে বিশ্বাস করেন। এর সঙ্গে একটি হাদিস জড়িত আছে। হাদিসটি হলো-হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘এ কালিজিরা সাম ছাড়া সব রোগের নিরাময়ক। আমি বললাম, সাম কী? তিনি বললেন, মৃত্যু!’
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩৬:৩৬ ৩২০ বার পঠিত