সোনারগাঁওয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের পশ্চিম বৈদ্যেরবাজার লঞ্চঘাট এলাকায় প্রায় দেড় লাখ বর্গফুট নদীর তীর ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে ভরাটের অভিযোগ উঠেছে আল মোস্তফা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্সের বিরুদ্ধে। গত সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের এক কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে দখলদারদের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আইনগত পদক্ষেপ নিতে চিঠি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার মাছঘাট এলাকায় দীর্ঘ এক মাস ধরে কয়েকটি ড্রেজারের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী মারীখালি নদী দখল করে ‘হেরিটেজ পলিমার এন্ড সেমি টিউবস লিমিটেড’ নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রউফ ও তার লোকজনের মাধ্যমে বালু ভরাট করে নৌপথ বন্ধ করে দেয়। এ নদী দিয়ে কাইকারটেক হাট, উদ্ধবগঞ্জবাজার ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ীদের নদী পথে মালামাল পরিবহন ও যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রউফ মারীখালি নদীর তীর থেকে কিছু অংশ বালু ভেকু দিয়ে সরিয়ে নেয়। এছাড়াও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ও কৃষিজমি ক্রয় না করেই ওই কোম্পানির লোকজন জোড়পূর্বক বালু ভরাট করে। বৈদ্যোরবাজার এলাকার হাজী আজিজুল্লাহর ৭টি দাগে প্রায় ১ একর ১০ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের স্ত্রী সুরাইয়া করিম মুন্নীর সঙ্গে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সুরাইয়া করিম মুন্নী বিরোধকৃত জমি ‘হেরিটেজ পলিমার এন্ড সেমি টিউবস লিমিটেডের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাফা কামাল ওরফে আল মোস্তফার নিকট বিক্রি করে দেন। মো. মোস্তফা কামাল ওরফে আল মোস্তফা বিরোধকৃত জমিতে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রউফের নেতৃত্বে ৩০-৩৫জনের একটি সিন্ডিকেট ওই জমির পাশ্ববর্তী দোকানপাট উচ্ছেদ করে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ভরাটের কাজ করে। এছাড়াও ওই এলাকার নিরীহ প্রবাসী সাখাওয়াত হোসেন, মজিবুর রহমান,শাহজালাল, হাজী গোলাম মোস্তফাসহ প্রায় ১০-১২জনের জমি ক্রয় না করেই কৃষি জমিতে বালু ভরাট করে। এ বালু ভরাট শেষে ওই কোম্পানি মেঘনা নদীর বৈদ্যেরবাজার ঘাট এলাকায় জেটির সামনে নদীতে বালু ফেলে নদীর ভরাট কাজ শুরু করে।
এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে মেঘনা নদীতে বালু ভরাটের সত্যতা পান বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের কর্মকর্তা জাহাঙ্গির হোসেন। এসময় তাকে দখলদাররা দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখে এবং তার সঙ্গে অসদাচরণ করে। পরে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তিনি অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর, সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড, ওসিহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চিঠি দিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোঃ গুলজার আলী। তিনি ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স নামে আল মোস্তফা গ্রুপ মেঘনা নদীর পশ্চিম বৈদ্যেরবাজার এলাকায় দৈর্ঘ্যে ২ হাজার বর্গফুট ও প্রস্থে ৭০০ বর্গফুট সর্বমোট ১ লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট নদীর তীরভূমি দখল ও ভরাট করে ফেলছে।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোঃ গুলজার আলী জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদী দখল ও ভরাট সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। দখলকারীরা যত প্রভাবশালীই হোকনা কেন তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বৈদ্যোরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোম্পানির জমিতে বালু ভরাট কাজে যুক্ত ছিলাম। নদীর পানিতে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ফেলার সঙ্গে জড়িত না।
সোনারগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিএম রুহুল আমিন রিমন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নদী দখলের সতত্যা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৭:৫৫ ৫৪০ বার পঠিত