নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী) মাহফুজুর রহমান কালামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়।
সোমবার বিকালে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মাইক ভাঙচুর করা হয়।
এ ঘটনায় সোনারগাঁ উপজেলার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঘটনার পর সোনারগাঁ প্রেসক্লাবে আওয়াম লীগ প্রার্থী মোশারফ হোসেনের পক্ষে তার ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম পৃথকভাবে একে অপরকে দোষারোপ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন ধার্য করা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।
এদিন বিকাল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও তার সমর্থকরা সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সুস্থতার জন্য দোয়া প্রার্থনা করছিলেন। দোয়া চলাকালীন সময়ে বিদ্রোহী প্রার্থী সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে আসেন।
এ সময় উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা তাদের নেতাদের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের সমর্থকরা মোশারফ হোসেন সমর্থদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন সাবেক সাংসদ আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।
হামলায় মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল রহমান সজীব, যুবলীগ কর্মী মোহন, রঞ্জিত, মনা ও হারুন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে আবদুল্লাহ আল কায়সার সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, নেত্রী আমাদেরকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন। সুতরাং, আমরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম প্রেসক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, মোশারফ হোসেনের সমর্থকরা মনোনয়ন জমা দিতে এসে দীর্ঘ সময় নির্বাচন অফিস ও উপজেলা চত্বরে অবস্থান করছিলেন। আমি যাতে নির্দিষ্ট সময়ে মনোনয়ন জমা দিতে না পারি সে জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে আমাকে ও আমার সমর্থকদের বাধা সৃষ্টি করে।
মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, বাধা পেয়ে কর্মী সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে এটি প্রতিহত করার চেষ্টা করতে গেলে মোশারফ হোসেন গ্রুপের লোকজন আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় সজীব, বাবু, আমজাদ নামের আমার ৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তবে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। আমি চাই সোনারগাঁয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
মোশারফ সমর্থকদের অভিযোগ, উপজেলা চত্বরে দুপক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সামনে উপস্থিত থাকলেও নীরব ভূমিকায় ছিলেন। পুলিশ চেষ্টা করলে সংঘর্ষের ঘটনাটি প্রাথমিক অবস্থায় নিরসন করতে পারতেন।
সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, হামলার ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, দুপক্ষের মধ্যে একটি সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৫:৩০ ২৬৯ বার পঠিত
