
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। তাদের অপকৌশলের কারণে প্রতিনিয়ত ঠকছেন ভোক্তা। তবে এ বিষয়ে তৎপর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
অধিদফতরের তথ্যমতে, বাজার তদারকি ও ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছরের ৪ মার্চ পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণেই ভোক্তারা ঠকে যাচ্ছেন। তবে অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যক্রমে ভোক্তারা কিছুটা সচেতন হচ্ছেন। তারা তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে অভিযোগ করছেন। আর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুফলও পাচ্ছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার দেশে পালিত হবে ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’। দিবসটি উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯’ প্রণয়ন করেছে। এ আইন দেশের ভোক্তা সাধারণের অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধ, ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সাহায্য করছে এবং জনগণ এর সুফল পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে নকল, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ, ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে কোনো ওষুধ, পণ্য বা সেবা বিক্রয়, ওজনে বা পরিমাপে কম দেয়ার মতো ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধ করা হচ্ছে।
ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিয়মিত বাজার তদারকির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক ও সহনশীল রাখতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর যুগান্তরকে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী চক্রকে ধরতে আমরা সক্রিয় আছি। প্রতিদিন দেশব্যাপী ভোক্তা অধিদফতরের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সপ্তাহে পাঁচ দিন তিনটি করে বাজারে অভিযান চলছে।
বিশেষ বিশেষ কিছু অভিযানে স্পেশাল মনিটরিং টিম করা হয়েছে। আর সাধারণ ভোক্তারাও সচেতন হয়ে কোনো অনিয়ম পেলে আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেও অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাছাড়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশের সার্বিক বাজার তদারকি করা হচ্ছে। সেখানেও কোনো অনিয়ম পেলে অসাধু ব্যবসায়ীদের আমরা ছাড় দিচ্ছি না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৪ মার্চ পর্যন্ত অধিদফতরের পক্ষ থেকে ১৫ হাজার ৭৪৬টি বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময় ৫৫ হাজার ৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অনিয়মে শাস্তি প্রদান করা হয়।
অনিয়মগুলো হচ্ছে- ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করা, ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারিত করা, ওজনে কারচুপি, বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপি, মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ওষুধ বিক্রি ইত্যাদি।
সূত্রমতে, বিভিন্নভাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করছেন ভোক্তারা। সেক্ষেত্রে ২০১০-১৩ সালে (পঞ্জিকা বছর) অভিযোগ এসেছিল মাত্র ১৭৯টি। পরের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আসে ২৬৪টি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৬২টি।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে ৬ হাজার ১৪০টি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লিখিত অভিযোগ হয় ৯ হাজার ১৯টি। আর চলতি অর্থবছরের ৪ মার্চ পর্যন্ত অভিযোগের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৪৭টি। সব মিলিয়ে ৬ বছরে মোট লিখিত অভিযোগের সংখ্যা ২১ হাজার ৮১১টি। এর মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮ হাজার ২১৮টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫১:১৮ ২০৫ বার পঠিত