
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“আজ ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকা পরিচালনা করে। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে সংঘটিত এ গণহত্যায় শহিদ হন ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অগণিত মানুষ। ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়।
আজকের এ দিনে আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। আমি সশ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করি ২৫ মার্চ কালরাতে নিহত সকল শহিদকে। আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থকসহ সকলস্তরের জনগণকে, যাঁদের অসামান্য অবদান ও
আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বাংলার মাটিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা ছিল ইতিহাসের অন্যতম নৃসংশতম
গণহত্যা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে অভিযানটি পরিচালনার মাধ্যমে তারা স্বাধীনতাকামী ছাত্রজনতার প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শহরসহ সারাদেশে রাতভর এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এক রাতেই ঢাকা শহর পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান, যার পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ন’মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নৃশংস হত্যাকান্ডরে শিকার হন ত্রিশ লাখ মানুষ। এত অল্প সময়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পর হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করে। ইতোমধ্যে অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করা হয়েছে। আমি আশা করি এ বিচার কার্যক্রম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গণহত্যা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১’র এ দিনে পাক হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যা ও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে বিশ্ববাসী জানতে পারবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যা, নিপীড়ন ও নির্যাতন বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বাঙালি জাতির এ বীরত্বগাঁথা আগামী দিনে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় অংশ নিতে আমি দল-মত-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩০:২৬ ২০৬ বার পঠিত