মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে দ্বিতীয় স্প্যান ‘৭বি, পদ্মায় নামছে ১৫ ডিসেম্বর। ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের কাছে নেয়া হবে। সেখানে পিলারের বেয়ারিংয়ে ওপর বসিয়ে দেয়া হবে স্প্যানটি। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মাথা উচুঁ করে দাড়াবে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২য় স্প্যানটি।
সেতুর এ স্প্যান যেখানে বসছে এই খুটির উপরের ভাগে সেই অনুযায়ী তৈরি করতে বিলম্ব হয়ে যায়। এই ‘গ্রাউটিং, সমস্যার কারণে সিডিউল পিছিয়ে দেয়া হয়েছে বলে শুক্রবার নিশ্চিত করেছেন কর্তৃপক্ষ। বিজয় দিবসের আগেই দ্বিতীয় স্প্যান স্থাপনের টার্গেট নেয়া হয়েছিল।
প্রকৌশলীরা জানান, আরো দুটি স্প্যান বসানোর মত খুঁটি (পিয়ার) প্রস্তুত হয়ে গেছে। কিন্তু খুঁটির ওপরে স্প্যানটি বসানো উপযোগী করা নিয়ে কিছুটা দেরি হচ্ছে। কারণ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুটিতে যেভাবে স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে এখন তার চেয়ে আরো সময় বেশি লাগছে। ৩৮ নম্বর খুটির সাথে দ্বিতীয় স্প্যানটির এক প্রান্ত যুক্ত করতে হচ্ছে। আর স্প্যানটির অপর প্রান্ত বসছে ৩৯ নম্বর খুঁটিতে। একই ভাবে তৃতীয় স্প্যানটির (৭সি) একপাশে ৩৯ নম্বর পিলারে এবং অপর প্রান্ত বসবে ৪০ নম্বর পিলারে। এই ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলার তৈরি সম্পন্ন। কিন্ত এর মাথায় ক্যাপের সাথে সেট করা নিয়েই গ্রাউন্ডিং করা হচ্ছে এখন। তাই ১০ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ১৫ ডিসেম্বর স্প্যান রওনা হচ্ছে।
এরপর এটি বাসাতে আরো কয়েকদিন লেগে যাবে। তবে কবে নাগাদ দ্বিতীয় স্প্যানটি বসানো হবে তা নিশ্চিত জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা নিশ্চিত করেছেন বিজয়ের মাসেই দ্বিতীয় স্প্যান বসছে। তৃতীয় স্প্যান বসবে নতুন বছরে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তৃতীয় স্প্যানটি বসানোর সম্ভবনা রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
প্রায় ৩ হাজার টন ওজনের ‘৭বি’ নম্বর স্প্যানটি ৩৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে পদ্মা নদী পাড়ি দিবে। এ লক্ষ্যে মাওয়া প্রান্তের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ‘৭বি’ নম্বরের স্প্যানটি পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে।
নতুন হ্যামার কাজ শুরু করেছে: এদিকে পদ্মা সেতুর নতুন যুক্ত হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি (হাতুরি) পাইল ড্রাইভ শুরু করেছে। এটির সফটওয়্যার ও কন্ট্রোল বক্স আসতে দেরি হয়েছিল। এরপর সোমবার থেকে পাইল ড্রাইভ করছে। ১৭ নভেম্বর এটি জার্মানি থেকে মাওয়ায় পৌঁছে।
এছাড়া ২ হাজার এবং ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার আরো দু’টি হ্যামার আনা হয়েছে। কিন্তু নতুন এ হ্যামার দু’টি চালু করাই সম্ভব হয়নি। তবে ২৪শ’ কিলোজুল এবং ১৯শ’ কিলোজুল ক্ষমতার দু’টি হ্যামারেই পাইল ড্রাইভ করে চলেছে।
১ নং খুঁটির কাজ শুরু হচ্ছে: পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে অধিকাংশ খুঁটিতেই কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই চারটি (৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪০) খুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি সর্বশেষ ৪২ নং খুঁটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। কিন্তু এখনও মাওয়া প্রান্তের প্রথম খুঁটির কাজ শুরু করা যায়নি। বৈচিত্র্যপূর্ণ মাটির কারণে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছিল। সর্বশেষ একটি টেস্ট চলছিল যা সোমবার শেষ হয়েছে।
এছাড়া সেতুর বাকি ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইনও সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে ওপর ‘৭এ’ নম্বরের স্প্যানটি স্থাপনের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে পদ্মা সেতুর প্রথম অবকাঠামো। ‘৭বি’ নম্বর পিলার স্থাপনের মাধ্যমে সেতুর অবকাঠামো আরো বিস্তৃতি লাভ করবে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরোটাই নির্মিত হবে স্টিল ও কংক্রিট স্টাকচারে। সেতুর ওপরে থাকবে চাল লেনের মহাসড়ক আর এর নিচ দিয়ে চলবে রেল।
এদিকে মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) কাজও এগিয়ে চলেছে। এ প্রান্তে ৪৫টি পাইল স্থাপন হয়েছে।
৩৫ লাখ কংক্রিট ব্লক প্রস্তুত: পদ্মা সেতুর মূল কাজের পাশাপাশি নদী শাসনের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আর এ জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১ কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিট ব্লক। এরই মধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ ব্লক তৈরি হয়েছে। এ পর্যন্ত নদী শাসনের মোট কাজ হয়েছে ৩৪ ভাগের বেশি। তবে এই সময়ে কাজের অগ্রগতি থাকার কথা ছিল প্রায় ৫৬ শতাংশ ।
এ বছরও জাজিরাই নদী শাসনের কাজ বেশি হচ্ছে। আড়াই কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার টার্গেট রাখা হয়েছে।
তবে আগামী বছর মাওয়ায় আধা কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসনের কাজের টার্গেট ধরা হয়েছে। পদ্মা সেতুন নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) সারফুল ইসলাম জানান, মাওয়ার মাছ বাজারের আশপাশে এখন ব্লক বিছানোর জন্য মাটি কম্পেকশন করা হচ্ছে। মাছ বাজারের কাছ থেকে ভাটির দিকে আধা কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ সম্পন্ন হবে এ শুস্ক মৌসুমে ।
নদী শাসনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হল নদী ভাঙ্গন রোধ করে মূল সেতু রক্ষা করা। নদী ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে এ ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে নতুন নদী সৃষ্টি করবে। এতে দেখা যাবে সেতু থাকবে এক জায়গায়, নদী থাকবে আরেক জায়গায়। তাই নদী শাসন করে এক স্থানেই নদীর অবস্থান ধরে রাখতে হবে।
প্রকৌশলীরা জানান, নদীর গতিপথ বিবেচনা করে ধারণা করা হচ্ছে আগামী ৫/৭ বছর পরে কাঠাঁলবাড়ীর দিকে নদী ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ভাঙ্গন রোধে ৮০ মিটার গভীর পর্যন্ত ড্রেজিং করে তার নিচে বালুর বস্তা দেয়া হয়েছে
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৬:৩৬ ৪৪০ বার পঠিত