মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের উষালগ্নে নৃশংসভাবে হত্যা করা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে তিনি রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এ শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ডা. সিরাজুল ইসলাম, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সফু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, সালাউদ্দিন ভুইয়া শিশির ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত ৪৬ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু যে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই গণতন্ত্র আজ হারিয়ে গিয়েছে। গণতন্ত্র আজ অনুপস্থিত।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে বিএনপি লড়াই করে যাচ্ছে, এ লড়াইয়ে আমাদের বিজয় হবেই ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানিরা পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছে। তাদের এই আত্মত্যাগ পূরণ হওয়ার নয়।’
এর আগে সকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
সকাল থেকেই মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করছে সর্বস্তরের মানুষ।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘অমর বুদ্ধিজীবীগণ দেশের বরেণ্য শ্রেষ্ঠ সন্তান, যাঁরা একটি সমৃদ্ধ এবং মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁরা ন্যায়বিচারভিত্তিক শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যাশা করেছিলেন।’
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার, আলশামস ঘাতকরা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে রাতের অন্ধকারে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে। তারা হত্যা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে তারা। অনেকের লাশই পাওয়া যায়নি। এভাবে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন চক্রান্তে মেতে ওঠে নির্মম ঘাতক-দালালরা। দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নিজ কর্মের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রভূত প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। মুক্তিকামী জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।
হানাদাররা সেদিন কেবল ঢাকাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী, পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী-কৃতী সন্তানকে অপহরণ করে মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করে। সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১১:০১ ৪৪২ বার পঠিত