
রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা অনেক তরুণ নেতাই আজ দেশের রাজনীতির মাঠ কাঁপাচ্ছেন, নিরলস পরিশ্রম করছেন দেশের তরুণ সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে। তেমনি একজন তরুণ নেতৃত্ব বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের উপদেষ্টা সৈয়দ তৈয়বুল বশর। মাত্র ৩০ বছর বয়সী এই তরুণ নেতা যুব সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন সেভ অ্যান্ড সার্ভ ফাউন্ডেশন, স্পোর্টস ফর লাইফ, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্রিকেট টিম ‘দ্য মাইটি এক্সপ্রেস’; নিয়েছেন বিভিন্ন উদ্যোগ। তাকে নিয়ে লিখেছেন জাহিদ হাসান দিপু
সৈয়দ তৈয়বুল বশর তার শিক্ষাজীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কাটান রাজধানীর স্কলাস্টিকা স্কুল, কার্ডিফ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন স্কুল অব কমার্সে। বাবা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় ছোটবেলা থেকে অর্থাত্ শিক্ষাজীবন শেষের আগ থেকেই তিনি ধীরে ধীরে জড়াতে শুরু করেন মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে। রাজনৈতিক ও সুফি পরিবার থেকে উঠে আসা এই তরুণ ছোটবেলা থেকেই উপস্থিত থেকেছেন বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে। ধীরে ধীরে অংশগ্রহণ করতে থাকেন বিভিন্ন ইসলামিক আলোচনা অনুষ্ঠানে। জঙ্গিবাদ থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সব ধর্মের মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান সেখান থেকেই।
২০১৪ সালে তিনি প্রথম ডাক পান ইয়াং বাংলার পক্ষে সংসদ সদস্য নাঈম রাজ্জাকের কাছ থেকে। রাজনীতির বাইরে এসে কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখান থেকেই তিনি সমাজের জন্য কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি কাজ করেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সঙ্গে।
যুব সমাজের উন্নয়ন, তাদের মাদকাসক্তি থেকে রক্ষা ও জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় বাবার স্বপ্নের ওপর ভিত্তি করেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেভ অ্যান্ড সার্ভ ফাউন্ডেশন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে কাজ করাই অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলেও এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি যুব উন্নয়ন, তাদের মাদকাসক্তি থেকে রক্ষা, নারীর অধিকারসহ বিভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর দেশে জঙ্গিবাদ নিরসনে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে তাদের প্রথম সেমিনার আয়োজন করে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
সকল ধর্মের মানুষদের নিয়ে সমাজ সংস্কার ও জঙ্গিবাদ রোধে সেভ অ্যান্ড সার্ভ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন তৈয়বুল বশর। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের আলেম-ওলামাদের নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন তিনি। জাতিসংঘের সহযোগিতায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের আলেম-ওলামাদের মধ্যে জঙ্গিবাদ বিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও শিশুশ্রম বন্ধ, নারীর অধিকার, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ ও তাদের অধিকার সংরক্ষণ, ডিজিটাল মিডিয়া ব্লগিং, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করছেন তিনি। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর অন্তত ২০ জন আলেমকে এ বিষয়ে বিভিন্ন কর্মশালায় অন্তর্ভুক্তির কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন তৈয়বুল বশর।
শুধু সমাজ সংস্কার কিংবা জঙ্গিবাদ নয়, যুব উন্নয়ন ও তাদের মাদকাসক্তি থেকে রক্ষার লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন খেলাধুলা বিষয়ক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম ‘স্পোর্টস ফর লাইফ’। এখানে শুধু মাদকাসক্তই নয়, এছাড়াও বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা ও হতাশায় আক্রান্ত তরুণদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। আগামী শীতের আগেই তৈয়বুল বশর তার এই পরিকল্পনা ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান।
পাশাপাশি স্পোর্টস ফর লাইফের অধীনে তৈয়বুল বশর গঠন করেছেন একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্রিকেট টিম ‘দ্য মাইটি এক্সপ্রেস’। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছে দলটি। তার এই দলে এখন ত্রিশজনের মতো তরুণ খেলোয়াড় থাকলেও এই দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় পাঁচ-শতাধিক। খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থান তৈরির দিকেও খেয়াল রেখে যাচ্ছে সংগঠনটি।
নিজের সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তৈয়বুল বশর কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সুধী সমাজের একজন হিসেবেই। বাংলাদেশের শান্তির অগ্রদূত হিসেবে জাতিসংঘসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন গণহত্যা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া বিভিন্ন সেমিনারে। এর মধ্যে সম্প্রতি আমেরিকা, ভারত, সুইজারল্যান্ড উল্লেখযোগ্য। সমপ্রতি তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে বাংলাদেশের তরুণ নেতা হিসেবে ভারত সফর করেছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। পাশাপাশি দেশে নারীদের ক্ষমতায়নে ‘দেশি বলার্স’-এর সঙ্গে একাধারে কাজ করে যাচ্ছেন সৈয়দ তৈয়বুল বশর।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৬:১২ ২১৪ বার পঠিত