আশা ছিল বিয়ে করবে একজন হাফেজ ছেলেকে। সেই অনুযায়ী পারিবারিক ভাবে বিয়েও হয়েছিল হাফেজ সামিউল ইসলামের সাথে গার্মেন্টস কর্মী মীমের (২২)।
বিয়ে হয় এক বছর আগে। বুধবার রাত ১১টায় ফতুল্লার কায়েমপুর এলাকার হাজী আমির হোসেনের ভাড়া বাড়ি থেকে মিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাতেই ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ কামাল উদ্দিনসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। ঘাতক স্বামী সামিউল পলাতক রয়েছে। নিহত মীমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ রাতেই ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে থানা সূত্র।
নিহত মীমের মা জমেলা জানান, মীম ফতুল্লার কায়েমপুরস্থ ফকির গার্মেন্টসসে চাকুরী করতো। চাকুরী জীবনে বেতন থেকে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছিল নিজের বিয়ের জন্য। মীমের আশা ছিল সে একজন কোরআনে হাফেজকে বিয়ে করবে। সেই অনুযায়ী এক বছর আগে মীমের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সামিউলের।
বিয়ের সময় সামিউলকে ১লাখ টাকা দিয়েছিল মীমের পরিবার। কিন্তু বিয়ের সময় মীমের পরিবার জানতো না যে, সামিউল এর আগে আরো একটি বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর সব ফাঁস হয়। এ নিয়ে মীম ও সামিউলের পরিবারের সাথে কথা কাটাকাটি হতো। পরে স্বামীর সাথে গ্রামের বাড়ি থেকে সস্তাপুর এলাকার আমীর হোসেনের বাড়িতে একটি রুম ভাড়া নেয় মীম ও সামিউল।
প্রায় ২ মাস আগে পুনরায় ফতুল্লার দক্ষিণ সস্তাপুরের এসবি গার্মেন্টেসসে চাকুরী নেয় মীম। স্বামী সামিউল ঠিক মতো ভরণ পোষণ দিতো না স্ত্রী মীমকে। দুই মাসের মধ্যে সামিউল স্ত্রীর ভাড়া বাড়িতে বেশি আসতো না। কিন্তু মাস শেষে বেতনের টাকার জন্য সামিউল তার স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করতো। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মীম চাকুরী থেকে বাসায় ফেরার পথে সামিউল তাকে রাস্তা থেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্যত্র তুলে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
এরপর মীম তার বাসায় ফিরে আসে। স্বামী সামিউল দক্ষিণ সস্তাপুরের মীমের ভাড়া বাসাতে রাতে অবস্থান করে। বুধবার সকালে মীমের মা মেয়ের খোঁজ নিতে মীমের বাসায় আসে। এসময় মীমের স্বামী মীমের মাকে জানায় যে, মীম কাজে যাবে না। এসময় মীম তার মাকে তার স্বামীর সাথে কথা বলতে নিষেধ করে। মা জামেলা বেগম চলে যায়।
এরপর সামিউল ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। বুধবার রাত সাড়ে ৭টার সময় মীমের ছোট বোন ইতি তার বোনের বাসায় আসে। এসময় মীমের মুখ চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল। অনেক ডাকাডাকি করে বোনের সাড়াশব্দ না পেয়ে ইতি চিৎকারে করে। পরে আশপাশের লোকজন এসে মীমকে মৃত দেখতে পায়।
তবে স্বামী সামিউল বাড়ি থেকে কখন বেড়িয়ে গেছে তা বাড়ির কেউ দেখেনি। ঘটনার পর থেকে সামিউলের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। নিহত মীম জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার কাচিহারা গ্রামের হারুনুর রশিদের মেয়ে। ঘাতক স্বামী সামিউল একই জেলা ও থানা এলাকার দক্ষিণ সিরাজাবাদ এলাকায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ কামাল উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি হত্যাকান্ড। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পর পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:০৪:২৯ ৬৯৮ বার পঠিত