নানা সমস্যায় জর্জরিত বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স হাসপাতাল। অভিভাবক হীন হয়ে পড়েছে। রোগীরা সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। সরকারী সুযোগ-সুবিধা ডাক্তারসহ সকল কর্মচারী ভোগ করলে চিকিৎসা সেবা দিতে অনীহা। এ যেন এক ধরনের বর্বরতা বলে মনে করছেন সচেতন মহল। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নীরবতাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন বিভিন্ন সংগঠন। রোববার সকালে হাসপাতালে প্রবেশ করলেই দেখা মিলে অন্য রকম দৃশ্যপট। সকাল ১১ টায় জরুরী বিভাগে ডাক্তারের দেখা মিললেও টিকেট কাউন্টারে ২ জনের স্থানে হারুন মিয়া একা দায়িত্ব পালন করছে। রোগীরা সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেননি। কষ্টের পাওয়া টিকেট নিয়ে গিয়েও ১১৯ নং কক্ষে ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. মঞ্জুর কাদেরকেও পাওয়া যায়নি। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাহাবুবুল আলম দ্বিতীয় তলায় রোগী দেখছেন। তিনি ঔষধ লিখে দিলেও কাউন্টারে থেকে রোগীরা ওই ঔষধ পাচ্ছে না। এ বিষয় হাসপাতাল উন্নয়ন কমিটির উপদেষ্টা ও মহানগর আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হুৃমায়ন কবির মৃধা বলেন, হাসপাতালের বিষয়ে আমি খুজ খবর রাখি। আমি প্রায় সময় যাই। তবে এমন অবস্থা মেনে নেয়া যায় না। এমপি মহোদয় সেলিম ওসমান ভাইকে বিষয়টি জানাবো।
টেসার বয় চালক- হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছে একজন টেসার বয়। প্রায় ৬/৭ বছর যাবত টেসার বয় আলমগীর রহস্যজনক কারনে চালকের দায়িত্ব পালন করলেও বেতনসহ সকল কিছুই সরকারী ভাবে পাচ্ছে টেসার বয়ের। তবে মাসিক ২শ`৫০ ঘন্টা টি এ বিলসহ অন্যান্য সুযোগ- সুবিধা চালক হিসাবে আলমগীর ভোগ করলেও বেতন পান টেসার বয়ের বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে । যা নিয়ে সর্ব মহলে চলছে নানা গুঞ্জন। এ বিষয়ে হাসপাতালের ইনচার্জ মঞ্জুর কাদের বলেন, গাড়ীটি ২০০৩ মডেলের, যে কোন চালক এটা চালাতে পারবে না। সরকারি ভাবে নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি নিলে কেউ অভিযোগ করলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতি কিলোমিটার আসা-যাওয়ার জন্য ২০ নির্ধারিত করা আছে। বেশি নেয়ার অধিকার কারো নেই। ঢাকা মিরপুর -১২` তে আসা-যাওয়ার জন্য ৪ হাজার টাকা দাবী করেন। পরে ৫শ` টাকা কমে ৩ হাজার ৫ শ` টাকা দাবী করে টেসার বয় চালক আলমগীর যার বয়েস রেকট প্রতিনিধির কাছে আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে ১১ শ` টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমান রয়েছে। প্রমান পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও আলমগীর যে টেসার বয় তা চাপিয়ে যান। কিন্তু কেন চাপিয়ে গেলেন। তার লাভ কি? আলমগীরের উপার্জিত অর্থের অংশ কি তিনিও পান। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। আলমগীরকে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আমরা এখানে চাকুরি করতে এসেছি। আমাদের ভাল-মন্দ আপনারা না দেখলে কেমনে হবে। আপনার কিছু লাগলে বলবেনতো ভাই। ভাই-ব্রাদার মিল না থাকলে আপনাদের এখানে চাকুরি করবো কিভাবে??? সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে কোন মেডেসিন বিভাগের ডাক্তার দেখা মেলেনি।
সূত্র মতে, নারায়নগঞ্জ জেলার
বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল প্রায়ত সাংসদ নাসিম ওসমানের প্রচেষ্টায় বর্তমানে ৫০ শয্য বিশিষ্ট হলেও চিকিৎসা সেবার মান অনেক খারাপ বলে রোগী আমির হোসেন জানান। সেবার মান উন্নয়নসহ গরীব, অসহায় লোকজন সরকারী হাসপাতালে আসে। ভাল চিকিৎসাসহ সরকারী সেবাগুলো যাতে রোগীরা পায় সেজন্য প্রায়ত সাংসদ নাসিম ওসমান উপদেষ্টা কমিটি করেছিল। তার মৃত্যুর পর ওই কমিটি আছে কি না তাও জানেন না বলেন হুমায়ন কবির মৃধা। যে ওই কমিটির উপদেষ্টা ছিল।
টেসার বয় হয়েও এ্যাম্বুলেন্স চালক আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে মনগড়া মত করছে সকল কিছু। সরকারী বেতনসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করছে নিজের ইচ্ছে মত। প্রতিমাসে লাখ হতে প্রায় দের লাখ টাকা উপার্জন করছে আলমগীর। রহস্যজনক কারনে সকল বিভাগই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। সরকারি এ্যাম্বুলেন্সের সেবা হাসপাতালে আগত রোগীদের ভাগ্যে জুটে না। নীরহ ও সাধারন পরিবারের লোকজন হাসপাতালে গিয়ে এ্যাম্বুলেন্স এর কথা বললেই নানা অজুহাত দেখান আলমগীর এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের । এমনকি সরকারি ভাবে নির্ধারিত টাকার ৪/৫ গুন বেশি টাকা দিয়েও তাদের ভাগ্যে জুটে না এর সেবা। উল্টো নানা লাঞ্চনার শিকার হতে হয় রোগীদের।
গোপন সূত্রে প্রকাশ, আলমগীর মূলত এ্যাম্বুলেন্স চালক না। আলমগীর একজন টেসার বয় রোগী উঠা-নামানোর জন্য যে টলি ব্যবহার করা হয় তাকেই টেসার বয় বলে । বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে তিনি এখন এ্যাম্বুলেন্স চালক। প্রতি মাসে প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা উর্পাজন করে আলমগীর। আর দূর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারন লোকদের, দূর্নাম হচ্ছে সরকারের। সরকারী ভাবে সরবরাহকৃত ঔষধের অর্ধিকাংশও রোগীদের ভাগ্যে জুটে না। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন বলেন, জনস্বার্থে সকল কিছু করতে পারি। জনগনের টাকায় বেতনসহ সরকারী সকল সুবিধা ভোগ করবেন, আর সেবা নিতে এসে রোগীরা ফেরত যাবে তা আমি এহসান উদ্দিন কখনো মেনে নিব না। জনগনের কল্যাণ মুখী কাজে বিন্দু পরিমান অন্যায়, অনিয়ম বা দূর্নীতিকে ছার দেয়া হবে না। সরকারী দায়িত্ব পালনে কেউ অবহেলা বা অনিয়ম করলে কঠিন হিসাব কষতে হবে বলে জানান বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি আরো বলেন, জনপ্রতিনিধি ইচ্ছে করলেই হওয়া যায় না। জনগনের খাদেম হয়ে কাজ করতেই আল্লাহ আমাকে চেয়ারম্যান বানিয়েছে। বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে প্রায় ২ মাসে ৩/৪ বার অবগত করেছে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। বিভিন্ন জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সত্যতা যাচাইয়ে কৌশল আটেন চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ। স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের পথকে অনুসরন করলেও একটু ভিন্নভাবে। নিজ এলাকায় হাসপাতাল প্রবেশ করার পূর্বেই ডাক্তাররা সর্তক হয়ে যাবে।
বন্দর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল কবির বলেন, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান ভাই অনেক চেষ্টার ফলে ৫০শয্য বিশিষ্ট করেছে। দূর্নীতি ও অনিয়ম যা হচ্ছে তা সহ্য করার মত না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে শারিরিক সমস্যায় আছি। সরকারের দূর্নাম হবে এমন কোন কাজে হাসপাতালের যে জড়িত থাকবে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী সচেতন মহলের। জেলা সির্ভিল সার্জনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বন্দর নাগরিক কমিটি, মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০২:৩৮ ৫৫৮ বার পঠিত