সারা বছর ধরেই রূপগঞ্জে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। চুরি, ডাকাতি, খুনখারাবি আর অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল গোটা রূপগঞ্জ জুরে। আত্মহত্যার প্রবনতা ছিল অনেক বেশি। বাল্যবিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ করা গেলেও একেবারে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
খুনের রূপগঞ্জ: পুলিশ, এলাকাবাসী, নিহতদের পরিবার, মামলার এজাহার ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বিগত বছরের পহেলা জানুয়ারী থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রূপগঞ্জে অন্তত ৩৫ নারী পুরুষ এবং শিশু খুন হয়েছে। যা স্বাধীনতার ৪৫ বছরের ভিতর এই উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ হত্যাকান্ড।
সূত্রমতে বছরের প্রথমদিন পহেলা জানুয়ারী উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মাঝিনা টেক এলাকায় খুন হয় ৩৮ বছরের অজ্ঞাত এক মানসিক প্রতিবন্ধী নারী। পুলিশের ভাষ্যমতে বর্ষবরন উদযাপনকারী মাদকাসক্তরা মাতাল অবস্থায় এই নারীকে গণধর্ষনের পর এলোপাথারী কুপিয়ে হত্যা করে। ২৮ জানুয়ারী তারাব পৌরসভার দক্ষিন মাসাবো গ্রামের গৃহবধু হাসনে হেনাকে গলাটিপে খুন করে স্বামী আনোয়ার। একইদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে কর্ণগোপ এলাকার একটি মজা ডোবা থেকে পুলিশ অজ্ঞাত এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। ৯ ফেব্রুয়ারী বলাইখা এলাকায় মহাসড়কের পাশে একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাতনামা এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরিরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ১২ মার্চ মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় চনপাড়া এলাকার প্রজন্মলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে এলাকার মাদক ব্যবসায়ী শাওন, মিল্লাত, সোহেল, ফয়সাল ও তাদের সহযোগীরা।
১৬ মার্চ পুলিশ মোগড়াকুল এলাকা থেকে গৃহবধু নাজমার লাশ উদ্ধার করে। স্বামী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাগারচড় এলাকার সুমন তাকে হত্যার পর ভাড়া বাড়িতে লাশ ফেলে পালিয়ে গেছে বলে পুলিশের ধারণা হয়। ২৫ মার্চ বড়ভিটা এলাকার শুক্কুর মিয়া তার স্ত্রী চায়নার শরিরে কেরোসিন ঢেলে দেয়। ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায় সে।
২৮ মার্চ চনপাড়া এলাকার ওমেদ আলীর ছেলে পুলিশ সোর্স খোরশেদকে হাত পা বেধে কুপিয়ে ও হাত পায়ের রগ কেটে খুন করে মাদক ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন, ডাকাত মোস্তফাসহ তাদের সহযোগীরা। ৮ এপ্রিল উপজেলার বাইপাস সড়কের কুশাবো এলাকায় এক তরুনীকে গণধর্ষনের পর হত্যা করে লাশ ঝোপের আড়ালে ফেলে রাখে অজ্ঞাত খুনীরা।
১২ এপ্রিল মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে খুন হয় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাজাহান ভূইয়াসহ আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাকর্মীদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২৪ মে উপজেলার কাহিনা এলাকায় মাদকের টাকা না পেয়ে অন্তঃস্বত্বা স্কুল শিক্ষিকা খাদিজা আক্তারকে পিটিয়ে হত্যা করে স্বামী মতিউর। পরে এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
৯ মে বাড়ির সীমানা নিয়ে ঝগড়াকে কেন্দ্র করে কাঞ্চন পৌরসভার চরপাড়া গ্রামের বলাই মিয়ার বড়ছেলে সাদেক ও তার স্ত্রী সুমা বটি এবং চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ছোটভাই আকমাল হোসেনকে। ২১ মে উপজেলার সুতালরা এলাকার ওয়াজেদ মিয়ার মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মসজিদে আরবি পড়তে গেলে মুয়াজ্জিন জহিরুল তাকে ধর্ষনের পর হত্যা করে লাশ পার্শবর্তী মোস্তাফিজ হাজীর পুকুরে ডুবিয়ে রাখে। দুদিন পর মোয়াজ্জিনের ভাষ্যমতে পুলিশ সেখান থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। আটক মুয়াজ্জিন চাঁদপুরের কচুয়া থানার রাতপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে।
৩১ মে উপজেলার কুশাবো এলাকায় মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে স্বামী সফিউল্লাহ গৃহবধু শান্তাকে হত্যা করে। পরে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালায়। পহেলা জুন কাঞ্চন রানীপুরা এলাকায় যৌতুক বাবদ অটোরিক্সা কিনে না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী নাঈম মিয়া বালিশচাপা দিয়ে খুন করে নববধু লাকী আক্তারকে। ১৭ জুন নিখোঁজের তিন দিন পর পুলিশ শীতলক্ষ্যা নদীর চনপাড়া এলাকা থেকে শিশু তাওহিদের লাশ উদ্ধার করে। সে তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাওহিদকে প্রতিপক্ষের আনোয়ার হোসেন হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয় বলে কবির হোসেন এজাহারে উল্লেখ্য করেন।
৩ জুলাই নিজের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়ার প্রতিবাদ করায় কাঞ্চন কেন্দুয়াপাড়া এলাকার কাঠমিস্ত্রি রাজিব চন্দ্র দাসকে কুপিয়ে হত্যা করে বখাটে জহিরুল। ২৪ জুলাই রূপগঞ্জের একটি কারখানায় সহকর্মীরা খেলাচ্ছলে পায়ূপথে বাতাস দিয়ে হত্যা করে শিশু সাগর বর্মনকে। সে নেত্রকোনার খাড়িয়াজুড়ি উপজেলার রাজিবপুর গ্রামের রতন বর্মনের ছেলে।
২৫ জুলাই তারাব সুলতানা কামাল সেতুর নীচ থেকে পুলিশ ভ্যানচালক সহিদুল ইসলামের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। সহিদুল পটুয়াখালির দশমিনা উপজেলার আদমপুরা এলাকার হাফিজুরের ছেলে। কে বা কারা তাকে হত্যার পর উক্ত জায়গায় ফেলে রেখে যায়। ৫ আগষ্ট উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের পাইস্কা এলাকার ইলিয়াছ কাজীর ছেলে ও স্থানীয় মোস্তফা একাডেমির নার্সারী বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফয়সালকে নৃসংসভাবে হত্যার পর স্থানীয় কবরস্থানের পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেয় খুনীরা। তিনদিন পর ৮ আগষ্ট পুলিশ সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। ১৬ আগষ্ট উপজেলার ইছাপুরা এলাকায় ভায়রার বাড়িতে বেড়াতে এসে খুন হয় নরসুন্দর হৃদয় চন্দ্র দাস। নিহত হৃদয় নরসিংদী সদর উপজেলার কারারচর এলাকার নন্দলাল দাসের ছেলে। ভায়রা রুহিদাস ও তার পরিবারের লোকেরা পরিকল্পিতভাবে হৃদয়কে হত্যা করেছে বলে নন্দলাল এজাহারে উল্লেখ্য করেন।
২৫ আগষ্ট উপজেলার ভান্ডাবো এলাকার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর স্কুল ছাত্র ও স্থানীয় ওমর আলীর ছেলে মারুফের হাতপা বাধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে শত্রুতার জেরে ভাড়াটিয়া জাহাঙ্গীর খুন করেছে বলে পরিবারের দাবি। একইদিন নোয়াপাড়া এলাকায় শালীসি বৈঠকে মোস্তফা মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীকে ইট দিয়ে মাথা থেতলে দেয় প্রতিপক্ষের লোকেরা। দুইদিন পর রাজধানীর সরোওয়ার্দী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্রে স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় পাষন্ড স্বামী ইস্তেফার হোসেনসহ ৩জন মিলে গৃহবধূ হামিদা আক্তারকে শ্বাসরোধ করে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গোপনে দাফন করে ছেলে। ২৯ সেপ্টেম্বর উপওজেলার ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের ব্রাহ্মণখালী সিএনজি ষ্ট্যান্ডের পাশে একটি ডোবা থেকে পুলিশ অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরিরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ৭ অক্টোবর দাউদপুর ইউনিয়নের বেলদী নদীঘাট থেকে খুন হওয়া অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৯ অক্টোবর রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর এলাকায় সন্ত্রাসী আরিফ ও শরিফ হোসেন একই এলাকার হোসেন ফকির ও তার স্ত্রী সোনিয়াকে কোপাচ্ছিল। এ সময় তাদের উদ্ধার করে দাদি ইসমত আরা এগিয়ে এলে তাদের লাথির আঘাতে হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ২০ অক্টোবর হাটাব এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী নবীর হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেয় খুনীরা। নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের কায়দায় ভুড়ি কেটে এবং ইট বেধে নবীরের লাশ ডুবিয়ে দেয়া হয়। ৭ দিন পর চনপাড়া ৬ নং ঘাটে নিহতের লাশ ভেসে উঠে।
২৬ অক্টোবর উপজেলার কর্নগোপ এলাকা থেকে পুলিশ ট্রাকচালক সালাউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে। সে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার যাদবপুর এলাকার নুরুল হকের ছেলে। ৩১ অক্টোবর উপজেলার গর্ন্ধবপুর নামাপাড়া এলাকায় এলোপাথারী ছুরিকাঘাত করে বৃদ্ধ শ^াশুড়িকে হত্যা করে জামাতা তোফাজ্জল। ৩ নভেম্বর আড়িয়াব এলাকা থেকে পুলিশ বরগুনার আমতলী উপজেলার ছিলা এলাকার নাদের মল্লিকের ছেলে আলাউদ্দিন মল্লিকের লাশ উদ্ধার করেন। ১৩ নভেম্বর তারাব পৌরসভার রুপসী এলাকা থেকে বাক প্রতিবন্ধী মালেকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে জামালপুরের মেলান্দহ থানার শিহরী এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে। ১৪ নভেম্বর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে খুন হয় মুড়াপাড়া ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের সভাপতি তৌকির হাসান তারা। তাকে প্রতিপক্ষের আইবুরসহ তার লোকজন গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে এজাহার সূত্রে জানা গেছে। ২৯ নভেম্বর মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকায় বিধবা রাজিয়া বেগমকে জবাই করে হত্যা করে কয়েকজন। পুলিশ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৬ জনকে আটক করছে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। সর্বশেষ ৩০ নভেম্বর রাতে তারাব সুলতানা কামাল সেতুর নীচের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পুলিশ বালু ব্যবসায়ী মোশারফের লাশ উদ্ধার করে। টাকা পয়সা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে তাকে তারই কর্মচারীরা এলোপাথারী কুপিয়ে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে বলে নিহতের স্ত্রী ইয়াসমীন আক্তার দাবি করেন।
অস্ত্রের ঝনঝনানি: ২০১৭ সালে রূপগঞ্জের শীর্ষ খবরের জায়গা দখল করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক জঙ্গি গোষ্টির ব্যবহৃত অস্ত্রের বিশাল মজুত উদ্ধারের ঘটনা। চলতি বছরের ২ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত টানা ৫২ দিনের অভিযানে পুলিশ ৪৭ টি অত্যাধুনিক চাইনিজ এসএমজি, পিস্তল, বিপুল পরিমান হ্যান্ড গ্রেনেড, রকেট লাঞ্চার, রকেট লাঞ্চারের প্রজেক্ট, অস্ত্রের ম্যাগাজিন, হাই ফিকোয়েন্সির নন ট্য্রাকার ওয়াকিটকিসহ কয়েক বস্তা গুলি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নভেম্বর পর্যন্ত সব আসামিকে গ্রেফতার করলেও পুলিশ আদ্যাবধি অস্ত্রের মজুতদারদের সন্ধান বের করতে পারেনি। অস্ত্রভান্ডার সন্ধানের ঘটনায় চলতি বছরে জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ সাফল্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। জানা যায়, চলতি বছরের ২ জুন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর থেকে মজুত করা বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের তালিকায় ছিল আইএসের ব্যবহৃত ৬২ টি চাইনিজ এসএমজি, ৪২ টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২ টি রকেট লাঞ্চার, ৪৯ টি রকেট লাঞ্চারের প্রজেক্ট, ৬০ টি ম্যাগাজিন, ৫ টি পিস্তল ও ২ টি নন ট্র্যাকার ওয়াকিটকিসহ বিপুল পরিমান গুলি।
রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, ঘটনার দু’দিন আগে একটি চাইনিজ এসএমজিসহ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বাগলা গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শরিফ মিয়াকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুসারে ১ জুন রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মতে ২ জুন পূর্বাচলের ৩ নং সেক্টর সংলগ্ন সীশেল আবাসিক কোম্পানীর বালুর নীচ থেকে একই ধরনের আরো দুটি চাইনিজ এসএমজি ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় ৫ নং সেক্টরের লেকের পানি থেকে বিশাল অস্ত্রভান্ডারের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে গনমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল হক বলেন, বাংলাদেশে নানা ধরনের সন্ত্রসী হামলা, দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকীর মুখে ফেলতে বিভিন্ন ধরনের চক্রান্ত চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় অস্ত্র মজুতের ব্যাপারটা থাকতে পারে। বিশাল অস্ত্রভান্ডারের সন্ধান লাভের পরের দিন ৩ জুন হাই ফ্রিকোয়েন্সির নন ট্র্যাকার ওয়াকিটকি ও হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। এ অস্ত্র উদ্ধার ঘটনায় আটককৃতরা ছিল বাগলার শরিফ মিয়া, ৫ নং সেক্টরের গোবিন্দপুর এলাকার নাইম মিয়ার ছেলে শান্ত, কামতা এলাকার রাসেল ও মাঝিপাড়া এলাকার শাহিন। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ৪ জুন উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের কুড়িয়াইল এলাকা থেকে স্থানীয় শমসের আলীর ছেলে মুরাদ নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তার দেয়া তথ্য মতে নতুন আরো অস্ত্রের সন্ধান পায় পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে শীতলক্ষ্যা নদীতে অস্ত্র লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করে সে। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৪ জুন গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল উপজেলা ভোলাব ইউনিয়নের বাসুন্দা এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির সহায়তায় নদী থেকে ৫ টি চাইনিজ এসএমজি উদ্ধার করেন। এদিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহমুদুল ইসলাম বাদী হয়ে আটক ৬ জনকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় অস্ত্র মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে রিয়াদ নামে একজনকে পলাতক দেখানো হয়। ৭ জুন পূর্বাচল উপশহরের ৫ নং সেক্টর এলাকার একটি লেক থেকে আরো একটি রকেট লাঞ্চারের শেল উদ্ধার করে পুলিশ। বিপুল পরিমান অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধারের পর থেকে লেকে আরো অস্ত্র আছে কি না সেটি তল্লাশি করার জন্যে সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হয়। পরে লেকের অর্ধেক পানি সেচা হলে ৭ জুন পানিতে একটি বক্স দেখতে পায় পুলিশ। পুলিশের উর্ধ¦তন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে রাতে বক্সটি লেকের পারে তুলে এনে খোলা হলে সেখানে রকেট লাঞ্চারের একটি শেল পাওয়া যায়। ১০ জুন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এ ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর ২৪ জুলাই পূর্বাচল উপশহরের ৫ নং সেক্টর থেকে আরো ৬ টি এসএমজি উদ্ধার করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। লেকের ওপরে একটি পানির ড্রেন থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় এসব এসএমজি উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে আইএসের ব্যবহৃত সর্বমোট ৭৪ টি এসএমজি উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদেস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৬:১৬ ৫০৪ বার পঠিত