
নিখোঁজ হওয়ার ১৭ দিন পর শুক্রবার দুপুরে মিনু আক্তার (৩৫) নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে র্যাব।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর কুতুবপুর এলাকার মঞ্জুর খোলা একটি বিলের মধ্যে বালিচাপা দেয়া অবস্থায় থাকা ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব নিহতের সাবেক স্বামী জুনায়েদ আহমেদকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন।
পুলিশ জানায়, লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত মিনু আক্তারের মা মদিনা বেগম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এলাকার জুনায়েদ আহমেদ সোনারগাঁ উপজেলার কাচঁপুর কুতুবপুর এলাকায় অলম্পিক ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সুবাদে কুতুপুরের আব্দুল হাসেমের দ্বিতীয় মেয়ে মিনু আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয়।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে তারা বিয়ে করেন। এটি ছিল জুনায়েদ আহম্মেদের দ্বিতীয় এবং মিনু আক্তারে পঞ্চম বিয়ে।
মিনুর আগের সংসারে তিন ছেলে রয়েছে। কিন্তু জুনায়েদের সংসারে কোন ছেলেমেয়ে হয়নি। এক বছর আগে জুনায়েদ দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়। কিন্তু স্ত্রীর পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় মিনু আক্তারের সঙ্গে জুনায়েদের বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে জুনায়েদের সঙ্গে মিনুর কয়েক দফা ঝগড়াঝাটি হয়।
নিহতের মা মদিনা বেগম আরো জানান, গত ২১ মে রাতে মিনুকে মোবাইল ফোনে কে বা কারা বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই মিনু নিখোঁজ হন। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সকালে মিনুর কোন কোন হদিস না পেয়ে তার মা ও তিন বোন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন।
এক পর্যায়ে জুনায়েদের বাড়ি গিয়ে মিনুর খবর জানতে চাইলে জুনায়েদ তার বর্তমান স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরদিন মিনুর মা বাদি হয়ে সোনারগাঁ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরে পুলিশ জুনায়েদের বাসা থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি ও নারীর মাথার লম্বা চুল জব্দ করে। কিন্তু পুলিশ জোনায়েদকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
২৩ মে ওই জিডির কপি নিয়ে মদিনা বেগম র্যাব ১১ কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
র্যাব ১১ সিও লে. কর্নেল কাজী সামসের উদ্দিন চৌধুরী বলেন, র্যাবের কাছে অভিযোগ আসার পরপরই র্যাব বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে তদন্ত শুরু করে।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে মিনু আক্তারের সাবেক স্বামী জুনায়েদ আহমেদকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জুনায়েদ সাবেক স্ত্রীকে হত্যা ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেখানো মতে মঞ্জুর খোলা বিল থেকে বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে। জোনায়েদের ভাড়া বাড়ির পাশের পুকুর থেকে জামা কাপড় উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাবে সিও আরো জানান, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জোনায়েদ জানান, প্রথম স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে জোনায়েদ ২১ মে রাতে সাবেক স্ত্রী মিনু আক্তারকে বাসায় ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করে জুনায়েদ।
পরবর্তীতে মিনু আক্তার ঈদের মধ্যে কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য জুনায়েদের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করলে জুনায়েদ মিনু আক্তারকে চড়-থাপ্পড় দেয়।
এক পর্যায়ে জুনায়েদ ঘরের মধ্যে থাকা একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে মিনু আক্তারকে মাথায় আঘাত করে। মিনু আক্তার ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে গেলে জুনায়েদ মিনু আক্তারের বুকের উপরে বসে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
হত্যার পর ভোরে মিনু আক্তারের বুকে রশি বেঁধে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘর থেকে টেনে বাড়ির পাশের পুকুরের কচুরিপানার ভেতর লুকিয়ে রেখে ঘরে ফিরে আসে। পরবর্তীতে জুনায়েদ সকালের দিকে তার কর্মস্থলে চলে যায়।
২৩ মে গভীর রাতে পুকুরের কচুরিপানা থেকে মিনু আক্তারের মৃতদেহ উঠিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে পাশের ড্রেজারে বালি ফেলার স্থানে নিয়ে গিয়ে গর্ত করে বালু দিয়ে চাপা দিয়ে লাশ গুম করে।
পরবর্তীতে মিনুর খোঁজে তার মা জুনায়েদের ভাড়া বাসায় আসলে জুনায়েদ কৌশলে পালিয়ে যায়।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, নিখোঁজ মিনু আক্তারের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৯:১৬ ১৮৫ বার পঠিত