আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ন্যায়বিচার একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং আইনের শাসনের মূলনীতি। সরকার বিশ্বাস করে, সকল নাগরিকের ন্যায়বিচারে প্রবেশের সমান অধিকার এবং নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ার অধিকার থাকা প্রয়োজন। তাই নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগোষ্ঠীর আইনি অধিকার নিশ্চিতকল্পে সরকার ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করেছে এবং জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান অফিসের মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে লিগ্যাল এইড অফিসারদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ‘রেস্টোরেটিভ জাস্টিস (আরজে) অ্যাপ্রোচ ইন মেডিয়েশন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আরজে’ আপস মীমাংসার একটি অনন্য পন্থা। এখানে অংশগ্রহণমূলকভাবে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। এটা সালিসের মতই একটি প্রক্রিয়া হলেও কিছুটা ভিন্ন। এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয়ভাবে দ্বন্দ্ব-বিবাদ মীমাংসা করা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বা ক্ষতি প্রশমনকে গুরুত্ব দেয়া হয়। পাশাপশি অভিযুক্তের জবাবদিহিতা তৈরি ও তার আচরণের সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। যেন তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষতিকর কাজ আর না করেন। এতে করে সমাজে শান্তি আসে, সম্প্রীতি বাড়ে এবং দ্বন্দ্ব-বিবাদ হ্রাস পায়।
আনিসুল হক বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক আইনি কাঠামোয় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’র অধীনে প্রত্যেক জেলা জজ আদালতে ‘জেলা লিগ্যাল এইড অফিস’ স্থাপনসহ সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণকে পূর্ণকালীন লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে পদায়ন করেছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ইতিমধ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের অন্তর্ভুক্ত। আর তাই লিগ্যাল এইড অফিসারগণ বর্তমানে আপস-মীমাংসার মাধ্যমেও বিরোধ নিষ্পত্তি করছেন। ভবিষ্যতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসকে ‘এডিআর কর্নার’ বা ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ পদ্ধতি ব্যবহার করে আপস-মীমাংসার ক্ষেত্রে আধুনিক ও যুগোপযোগী পন্থা প্রয়োগের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে বিরোধ মীমাংসায় লিগ্যাল এইড অফিসারগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আমার বিশ্বাস। আইনগত সহায়তার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বপ্রণোদিত, দ্রুত ও কার্যকর আইনিসেবা নিশ্চিত করতে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর অংশীদারিত্ব স্থাপন বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্যও অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ হাজার। 
সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০১৬ সালে এই লক্ষ্যমাত্রার ১৭৮ শতাংশ অতিরিক্ত অর্জিত হয়েছে। এই সংখ্যা নির্দেশ করে যে, ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সক্ষমতা জানতে কার্যকর অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশে জিআইজেড প্রকল্পের উপ জাতীয় প্রকল্প পরিচালক প্রমিতা সেন গুপ্ত বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৭:০৩ ১৪৭ বার পঠিত