শিল্পাঞ্চল খ্যাত রূপগঞ্জে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। কোন আইনকে তোয়াক্কা না করে ইটভাটার মালিকরা পেশীশক্তির বলে লোকালয়ে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। শুধু তাই নয় ভাটার অনেক জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ইটের ভাটা। এসব ব্যাপারে কেউ কথা বললেই হয়রানী করা হচ্ছে মিথ্যা মামলায়। ইটভাটা বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের শরনাপন্ন হয়েছেন এলাকার কয়েক হাজার ভুক্তভোগী মানুষ। উপজেলার সাওঘাট, ভোলাব, কাঞ্চন, বিরাব, দাউদপুর, মাসাবো, বরপা এলাকার ইটের ভাটায় পাওয়া গেছে এমন চিত্র।
জানা গেছে, পরিবেশ আইনকে তোয়াক্কা না করে উপজেলার জনবসতিপূর্ণ সাওঘাট এলাকায় ইসলাম ব্রাদার্স নামে একটি ইটের ভাটা তৈরী করেছেন স্থানীয় হাজী শের আলী। ভাটার উভয়পাশে বেশ কয়েকটি গার্মেন্টসসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে দুটি ইটভাটা। কাঞ্চন বিরাব, বরপা, মাসাবো এলাকার ইটভাটাগুলোও জনবসতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার পাশে গড়ে তোলা হয়েছে। এসব এলাকায় হাজার হাজার মানুষ কর্মরত।
সাওঘাট এলাকার ইট ভাটার পাশ দিয়েই চলে গেছে রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সড়কও। এই ভাটা গড়ে তোলার জন্য এলাকার রফিকুল ইসলাম মীর, সুরেশ চন্দ্র, নরেন্দ্র, যোগেন্দ্রসহ আরো অনেকের জমি জোরপূর্বক ভাটার দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় উল্টো তাদের চাঁদাবাজির মামলায় হয়রানী করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। লোকালয়ে ইটভাটাটি স্থাপনের কারণে ওই এলাকার জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকার শিশু কিশোর বয়স্ক লোকজন ও পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সর্দি-কাশি, শ^াসকষ্ট, হাপানীসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন-২০০১ এর ১৭ নম্বর ধারায় ইট ভাটার লাইসেন্স প্রদানের ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের। তিনি ইট ভাটা পরিদর্শন করবেন বা তার সম-মর্যাদার যে কোন কর্মকর্তা পরিদর্শন করবেন। ইট পোড়ানো আইনের ধারা ৪৬৫ এর উপধারায় বলা আছে আবাসিক এলাকা, উপজেলা সদর, ফলের বাগান, বনাঞ্চল, লোকালয় ও জনবসিত এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। সর্বোচ্চ দেড় একর জমিতে নদী খালের ধারে ইট ভাটা স্থাপন করার নিয়ম থাকলেও তার কোনটিই মানা হয়নি ইসলাম ব্রাদার্সসহ রূপগঞ্জের অধিকাংশ ইটভাটায়।
এ ব্যাপারে ভাটার মালিক শের আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোন ইটভাটা আইন মেনে গড়ে তোলা হয়নি। আর আমি কোন অবৈধ কাজ করছি না। যারা জমি দখলের অভিযোগ তুলেছে সেসব জমি মালিকদের সাথে আমার মামলা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি হলেই বোঝা যাবে আমি জমি দখল করেছি কি না।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, এমন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটের ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে সেটা আমার জানা ছিল না। দু’একদিনের মধ্যে সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করার পর জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৯:৫৯ ৭১৮ বার পঠিত