নারায়ণগঞ্জ ফের উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে হকার ইস্যু নিয়ে সংঘর্ষের পর নতুন করে আবারও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারেন সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র আইভী।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সাংসদ শামীম ওসমানের একটি প্রস্তুতিমূলক সভায় তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যে এমনই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই সভাতে শামীম ওসমান যে ভাষায় তাঁর বক্তব্য প্রদান করেছেন তাতে করে সংঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
ইসদাইরে পৌর ওসমানী স্টেডিয়ামে দলীয় নেতাকর্মী সমতে সভা করেন সাংসদ শামীম ওসমান। সভায় আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ মহাজোটের সর্বস্তরের নেতাকর্মী নিয়ে ঘোষিত জনসভা সফল করার লক্ষ্যে এই প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় শামীম ওসমান মেয়র আইভী ও প্রশাসেনর প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্যের বিভিন্ন অংশই ছিলো ক্ষিপ্র ভাষা প্রয়োগে। তবে প্রশাসেনর সমালোচনা থেকে মেয়র আইভী’র প্রতিই বেশি বিষোদগার করা হয়। দেয়া হয় হুমকিও।
শামীম ওসমান এই সভায় তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘নিয়াজুল, শাহ নিজামদের ধরবেন তো দূরের কথা, একটা চুলও যদি স্পর্শ করেন তবে, নারায়ণগঞ্জে আগুন জ্বলবে’। এছাড়াও আইভীকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেছেন, ‘কি মনে করছেন, এই মামলা দিয়া আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পোলাপাইনদের আটকাইবেন? বেশি ফালাইয়েন না। ধৈর্যের একটা সীমা আছে।’
শুধু তাই নয়, শামীম ওসমান এখানে প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেছেন, ‘নিয়াজুলের উপর যাঁরা হামলা চালাইছে তাঁদের ধরেন। যাঁরা অস্ত্র নিছে তাঁদের ধরেন। যদি না পারেন তাইলে বলেন, জনগণ নিয়া বিচার আমরা করবো। যা হওয়ার হবে, আমি বুঝবো।’
এদিকে শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যকে অনেকেই উস্কানিমূলক বক্তব্য বলেই মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বলছেন, একজন জনপ্রতিনিধির বক্তব্যে এমনটা অপ্রত্যাশীত। তাঁর এই বক্তব্যের কারণে নেতাকর্মীরা সংঘাতে জড়াতে উৎসাহিত হবে। ১৫ জানুয়ারির সমাবেশে দেয়া শামীম ওসমানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি টেনে তাঁরা বলেন, এদিন শামীম ওসমানের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণেই ১৬ জানুয়ারি নগরীতে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়েছে। এবারও তিনি একই রকম উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। ফলে আগামীতে ফের সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রশ্ন করে বলেন, আসলে শামীম ওসমান কি চাচ্ছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। নির্বাচনী বছওে দলীয় প্রধান থেকে শুরু করে প্রায় সকলেই যেখানে জনসাধারণকে কাছে টেনে নেয়ার চেষ্টা করছেন, ভোটারদের সাথে দূরত্ব ঘুচিয়ে নিচ্ছেন সেখানে তিনি কেন নিজ দলীয় লোকদের সাথে সংঘাত সৃষ্টি করতে চাইছেন? এতে করে তিনি কি আওয়ামী লীগের ক্ষতি করছে না লাভ করছে?
এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন নারায়ণগঞ্জ টুডে’কে বলেন, “সে (শামীম) একজন সরকার দলীয় এমপি’র এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য কাম্য না। এতে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। এভাবে যদি সে বলে তবে, আগামীতে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার চেয়ে আরও জটিল হবে। আর বিচার করার মালিক তো সে না। বিচার করবে আইন, আদালত। আইন সবার জন্য সমান। বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু সে-ই না, আমাদের সকলকেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়।”
প্রসঙ্গত, ২৫ ডিসেম্বর নগরীর হকার উচ্ছেদ অভিযান চালায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন। এরপর থেকেই ফুটপাতে ফেরার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন উচ্ছেদকৃত হকাররা। চলমান আন্দোলনে কোথায় তেমন একটা সুবিধে করতে না পারায় শামীম ওসমানের শরানাপন্ন হন তাঁরা। পরে হকারদের আয়োজনে ১৫ জানুয়ারি এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এই সাংসদ। সেখানে তিনি হকারদের ফুটপাতে বসার নির্দেশ দেন এবং তাঁর দলীয় কর্মীদের হকারদের সাথে থাকার নির্দেশনাও দেন। এরপরই ১৬ জানুয়ারি মেয়র আইভী ও তাঁর সমর্থকদের মুখোমুখি হয় শামীম ওসমান সমর্থকরা। এতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষের মেয়র আইভী, সাংবাদিক শরিফউদ্দিন সবুজসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত নড়েচড়ে বসেন।
বাংলাদেশ সময়: ০:০৪:৪০ ৪১০ বার পঠিত
