বিপদসীমার ১২ সে.মি. ওপর দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বিপদসীমার ১২ সে.মি. ওপর দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত
বুধবার, ২ অক্টোবর ২০১৯



---

পদ্মা নদীর কুল ঘেষে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের দেবগ্রাম এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া গেজ স্টেশনে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার নদী বেষ্টিত ৮৫ কিলোমিটারের নদী তীরবর্তী বিভিন্ন অংশে নদী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘ভাত রাদবার বইছিলাম- অল্পের জন্যি মরি নাই। ভাতের পাল্যা-রাদার ঘর একবারেই ভ্যাঙ্গা নিয়্যা গ্যাছে নদীতে। তিন ম্যায়া নিয়্যা কনে যাবো, বাপের ৬০ বিঘা জমি আর থাহার ভিটার সব কিছুই শ্যাষ। এহন না খেয়ে মরতে হবে আমাগো। দেহার কেউ নাই যে, পদ্মার ভ্যাগনে এহন পথে পথে থাকতে হবে’

এভাবেই আহাজারি করছিলো রাজবাড়ীর পদ্মা নদী ভাঙনে নিঃস্ব গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড হাতেম মন্ডলের পাড়ার বাসিন্দা রেহেনা বেগম।

পদ্মার উত্তাল স্রোতে ভেসে আসে কান্নার হু-হু শব্দ। বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে কোন দিকে পালাবে দিক খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। চারপাশে শুধু পানির প্রবল স্রোতের ঢেউ আর নদীর জলে ভেসে যাওয়া ঘর বাড়ি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাট ভাঙন হুমকির মুখে পড়েছে।

দৌলতদিয়া ১নং ফেরি ঘাট থেকে উজানে দেবগ্রাম, অন্তার মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিলেও দৌলতদিয়া ঘাট রক্ষায় ১৮০ মিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছেন জানিয়েছেন রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, দৌলতদিয়ার হাতেম মন্ডলের পাড়ায় ভাঙনে পানির স্রোত সরাসরি গিয়ে আঘাত হানছে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে। এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছে ফেরি ও লঞ্চ ঘাট। সেই সঙ্গে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা। এরই মধ্যে দৌলতদিয়া প্রান্তের ১নং ফেরিঘাট বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ৩ এবং ৬নং ফেরিঘাট।

পানিতে প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হলো রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া, সদর উপজেলার মিজানুপুর, বরাট ও কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ও কালিয়কাপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের ৫শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

একদিকে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার ফলে দেখা দিয়ে নদীর কুল ঘেষা অঞ্চলে প্লাবিত অপর দিকে ভাঙনের তাণ্ডবে নিঃস্ব পদ্মা পাড়ের বসতিরা।

বুধবার সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন ঢল্লাপাড়া, বেপারী পাড়া, হাতেম মেম্বর পাড়া ঘুরে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পরিবার তাদের দীর্ঘদিনের ঠিকানা থেকে সহায় সম্বল গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার ভাঙনের শিকার হওয়া পরিবার রয়েছে। তাদের শেষ জমিটুকু হারিয়ে পরবর্তী ঠিকানাও মেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে মকসেদ শেখ, ফেলু মন্ডল, আনোয়ার, রেহেনা বেগম, জবেদা খাতুন, ফুলজান বেগম, হালিমন বেগমের বাড়িসহ ২০০ বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এ সময় ভাঙনের শিকার হওয়া দৌলতদিয়া এলাকার হাতেম মন্ডলের পাড়া রেহেনা বেগম জানান, এখানে তাদের ৬০ বিঘা জমি ছিলো। চলতি দফায় ৫ দিনের ভাঙনে তাও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে অন্যের জমিতে ফেলে রাখা হয়েছে।

দৌলতদিয়া ২নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনে হাতেম মন্ডলের পাড়া, আফসার শেখের পাড়া ও সিদ্দিক কাজীর পাড়া ২০০টি, ১নং ওয়ার্ডের চানখারপাড়া, সাত্তার মেম্বার পাড়া, বেপারী পাড়া, সাহজুদ্দিন পাড়া ও লালু মন্ডল পাড়া এলাকার ১৪০টি এবং দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি, মুন্সিপাড়া ১৬০টি পরিবারসহ প্রায় ৪০০ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ওদিকে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটের উজানে দেবগ্রামের কাওলজানি এলাকার ভাঙন দেখে ঘাট এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার বলেন, ‘কয়েক বছরের পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে ইউনিয়নটির অর্ধেকের বেশী নদীতে চলে গেছে। মানুষের হাহাকার দেখে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনের কাছে বার বার গিয়েছি। আমাদের একটিই চাওয়া ছিলো ত্রাণ নয়, নদী শাসন চাই। কিন্তু সে বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তেক্ষেপ কামনা করছি।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ভাঙন অব্যাহত থাকলে দৌলতদিয়া ফেরী ও লঞ্চ ঘাট হুমকির মুখে পড়বে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, বন্যায় আক্রান্তদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে আক্রান্তদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন ফেরিঘাট সহ অনান্য ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাট রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই অন্তত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ঠিক রাখতে জরুরী ভিত্তিতে ফেরি ও লঞ্চ ঘাট রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩২:৪২   ১৬৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ