
মোসলেমা নাজনীন:
সন্ধ্যা হতে না হতেই পড়ার টেবিলে বসতে হয় ছোট্র রানুর। রানুর বয়স ১১ বছর, সে ৫ম শ্রেনীতে পড়ে। ঢাকার নামকরা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সে, পড়া লেখাও ভালো। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ তাঁর লেখাপড়ার প্রতি কেমন যেনো একটা অনীহা তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই সে মায়ের সেল ফোন অথবা কম্পিউটার নিয়ে থাকতেই বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এমনকি তাঁর ক্লাসের বন্ধুদেরকেও এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে। সব সময় মনের মধ্যে কেমন যেন অন্য চিন্তা, পড়ালেখায় অমনোযোগী। বিষয়টি নজরে পড়ে তার স্কুলের অংক শিক্ষকের। একদিন স্কুলের টিফিন ব্রেকে তিনি অন্য দু’একজন শিক্ষকের সাথে রানুর বিষয়টি আলাপ করেন। সাথে সাথে ইংরেজি এবং বিজ্ঞানের শিক্ষকও রানুর বর্তমান সময়ের পরীক্ষাগুলোতে কম নাম্বার পাওয়ায় বিষয়টি উল্লেখ করেন। পড়াশুনায় বরাবরই
ভালো ছিল বলে রানুর বর্তমান পরিবর্তনগুলো তাদের ভাবিয়ে তুলে। বিজ্ঞান শিক্ষক খাদিজা আপা মন্তব্য করেন, এ রকম বয়সে কিছু সাময়িক মানসিক পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু অংক শিক্ষক রোমানা আপার মন কিছুতেই তা মানতে নারাজ। তিনি স্কুল ছুটির সময় রানুর মায়ের সাথে বিষয়টি শেয়ার করেন। রানুর মা কাউকে কিছুই বলেন না। তিনি দেখেন রানু বেশিরভাগ সময়ই তো কম্পিউটারে পড়াশুনা করে, মাঝে মাঝে বিরতিতে গেইম খেলে। বিষয়টি খুব স্বাভাবিক মনে হলেও আসলে তা খুব স্বাভাবিক ছিলো না। রানু কম্পিউটার গেইম খেলার পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট গেইমের প্রতি তাঁর আসক্তি তৈরি হতে থাকে। একটি পর্যায়ে এই গেইমের মাধ্যমেই একটি ফেইসবুক রিকোয়েস্ট পায় রানু। তাঁর মাকে না জানিয়েই সে তাঁর মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ঐ রিকোয়েস্টটি গ্রহণ করে এবং গেইমের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় ঐ আইডি’র সাথে বিভিন্ন ধরনের বিষয় শেয়ার করতে থাকে। সে আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে শুরু করে তাঁর খেলাধুলা, ছবি আঁকা, গান শেখার মতো সুকুমার বৃত্তিগুলো থেকে। হঠাৎ একদিন রাত্রে রানুর মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি লক্ষ্য করেন রানু খুব লুকিয়ে মোবাইলে যেন কি লিখছে। তিনি রানুর মুখের দিকে তাকান ভাল করে। তাঁর মুখায়ব অস্বাভাবিক লাগে তার কাছে। তিনি বিষয়টি ধরা না দিয়ে, না দেখার ভান করে থাকেন। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি তার মোবাইলের ফেইসবুকে গিয়ে দেখেন একটি সুন্দর ফুলের ছবি সমেত একটি নতুন আইডি তার বন্ধুর তালিকায় সংযোজিত। তিনি ঐ আইডি’র রিকোয়েস্ট সে কখন গ্রহণ করেছেন তা মনে করতে পারছিলেন না। তিনি হঠাৎ করে ঐ আইডি’র ম্যাসেঞ্জারে গেলেন যে কোনদিন তাদের মধ্যে কোন ধরনের কথাবার্তা হয়েছে কিনা তা দেখতে। ম্যাসেঞ্জার খুলতেই তার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তিনি দেখলেন ঐ আইডি’র সাথে রানুর বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা এবং তা খুব স্বাভাবিক তো নয়ই বরং তিনি নিজেও এ ধরনের বিষয়ের সাথে কিছুটা অপরিচিত। সেখানে রানুকে তারা
তাদের দলে যোগ দেয়া এবং তার অন্য বন্ধুদেরকেও তাদের সাথে কাজ করার জন্য বিভিন্নভাবে তাদের দিকে আকর্ষণ বাড়াতে চাচ্ছে। রানুর মা শিক্ষিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। তিনি বিষয়টি তার বান্ধবীর হ্যাজবেন্ডকে বলেন। তিনি পুলিশ বাহিনীতে কাজ করেন। তিনি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিয়টিকে নেন। রানুর মায়ের কাছ থেকে তিনি আইডি নিয়ে পরীক্ষা করে এ সম্পর্কে তিনি রানুর মা-কে সচেতন করেন। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ভবিষ্যতের ভয়াবহ সর্বনাশ
থেকে বেচেঁ যায় একটি পরিবার।
বাংলাদেশ সময়: ২০:০৭:১৮ ৩০৮ বার পঠিত