
নিউজটুনারায়ণগঞ্জ : নতুন পাসপোর্ট করতে গিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। পাসপোর্টের আবেদন পত্র হাতে পেয়ে প্রাথমিক কাজ শেষ করে পাসপোর্ট অফিস আবেদনকারীর তথ্য যাচাইয়ের জন্য পাঠায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা এসবি কার্যালয়ে। জেলা পর্যায়ে হলে সেটা যায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট থানার একজন উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) সহকারী পরিদর্শক (এসআই) কিংবা ইন্সপেক্টরকে তথ্য যাচাইয়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ঐ কর্মকর্তা তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে পাসপোর্ট অফিসে যে প্রতিবেদন পাঠান – সেটিই ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ নামে পরিচিত। বর্তমানে প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রথমে ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে একজন আবেদনকারী পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করেন। এক্ষেত্রে সাধারণ অর্থাৎ এক মাস সময়ের মধ্যে, জরুরী অর্থাৎ সাত দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাবার ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় সমস্যার করণে অনেককেই দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন এমন মানুষের তিন-চতুর্থাংশকেই পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত টাকা দিতে হয়। যে কারণে ইতিমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন এবং টিআইবিসহ অনেক সংস্থা পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা তুলে দেবার প্রস্তাব করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেবার সময়েই যেহেতু নাগরিকদের পরিচয় যাচাই হচ্ছে এবং সে তথ্য কর্তৃপক্ষের ডাটাবেসে রক্ষিতও আছে, সেহেতু পাসপোর্ট করানোর সময় আবার নতুন করে পরিচয় যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা কী? একই প্রশ্ন তুলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পার্সপোর্ট ইস্যু করতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে পাসপোর্ট অধিদফতরগুলোকে ডাকলে তারা সংসদীয় কমিটিকে দেরির বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করে। সেখানে পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এর আগে ২০১১ সালে পাসপোর্ট অধিদফতরও পুলিশ ভেরিভিকেশন বাতিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। তবে, পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখা তাতে আপত্তি তোলে। পরে ২০১২ সালে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল চেয়ে একটি নোটিশ দেন।
গত আগস্ট মাসে পাসপোর্ট প্রদানে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে। সেখানেও তারা পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের সুপারিশ করে।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে পুলিশ ছাড়া মোটামুটি সব পর্যায়েই এটিকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এটি দ্রুত বাতিল করে মানুষের পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ, ঝামেলাহীন ও ভোগান্তিমুক্ত করা হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১০:৫৬ ১০৯ বার পঠিত