গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ বুধবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘বিশ্ব বসতি দিবস ২০১৯’ উপলক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা ‘জিরো টলারেন্স’। সেটাকে আমরা ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছি। দুর্নীতি যেখানে, সেখানেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুর্নীতিতে জড়িত কারো পাশে আমি থাকব না। দুর্নীতি যিনি করবেন তিনি আমার টিমে থাকবেন না। আত্মীয়, রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এর কোনটিই দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত কাউকে রক্ষা করতে পারবে না।’
বর্জ্য দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে যেখানে শিল্প হবে সেখানে ইটিপি পদ্ধতি, যেখানে আবাসন হবে সেখানে এসটিপি পদ্ধতিতে বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে নিঃশেষ করা হবে। তা না হলে আমাদের আগামী প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। পূর্বাচলে প্রতিটি বাড়ির জন্য আমরা বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের নির্দেশনা রাখবো। সমন্বিত বা ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যবস্থাপনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল করেছে। তবে এই উন্নয়ন হতে হবে টেকসই উন্নয়ন। ঠুনকো বা অস্থায়ী উন্নয়ন দেশকে ভালো কিছু দিতে পারে না। এজন্য আমরা সারা দেশকে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় নিয়ে আসছি। ব্যক্তিগত জমিতেও অপরিকল্পিত কিছু করতে দেয়া হবে না। পরিকল্পিত উপায়ে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার হতে হব।’
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির মতো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আমাদের উন্নয়নকে ব্যাহত করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এদেশে অনৈতিকতাপূর্ণ কোন বিষয়কে সরকার অনুমোদন করবে না। একটিও অনৈতিকতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডের লাইসেন্স শেখ হাসিনা সরকার দেয়নি। আমরা চাইনা, স্পোর্টস ক্লাবের ভেতরে ক্যাসিনো বা মাদকের ব্যবসা চলবে, অনৈতিকতার বিস্তার ঘটবে। এটা শেখ হাসিনা সরকার কোনভাবে বরদাশত করে না। সে জন্য আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আমরা কেউ জানিনা কে কখন গ্রেফতার হবেন। অনৈতিকতা ও দুর্নীতিতে যিনিই জড়িত থাকবেন, তিনিই গ্রেফতার হবেন। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের পরিষ্কার কথা, সকলকে নৈতিকতার মানদণ্ড দৃঢ়তার সঙ্গে ধারণ করতে হবে। দুর্নীতিকে শতভাগ না বলতে হবে। না হলে কঠোর অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে আমরা মাত্র তেরো মাসে বিশতলা ভবন করেছি। এই কৃতিত্ব দেশে কেবল গণপূর্ত অধিদপ্তর দেখাতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের পূর্বাচল প্রকল্প পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব বিধায় এর জন্য বিশ্ব পরিমণ্ডলে আমরা পুরস্কার অর্জন করেছি। দেশের বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন আমাদের হাতে হয়েছে। কিন্তু কিছু ঘটনা আমাদের অর্জনকে কলঙ্কিত করে তোলে। এ কারণে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘খারাপ, নৈকিতকাবিরোধী, দুর্নীতিপূর্ণ কোন কাজকে আমরা সমর্থন করিনা। আপনারা দেখেছেন, এর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিই। দুর্নীতিতে জড়িত প্রকৌশলীর সংখ্যা এক শতাংশও হবে না। কিন্তু আমি চাই ০.০০৯ ভাগও দুর্নীতিতে জড়িত থাকবে না। গণহারে সকলকে অপদস্থ করার জন্য প্রচারণা হলে রাষ্ট্রের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। এ জন্য কেউ দুর্নীতিতে জড়িত না থাকলে গণহারে সকলকে তালিকাভুক্ত করবেন না। গণমাধ্যমে আমাদের ত্রুটির কথা যেমন বলবেন, তেমনি ভালো কাজগুলোও তুলে ধরবেন। তাহলে আমরা উৎসাহবোধ করবো।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকৌশলীদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে, সততার সঙ্গে কাজ করবেন, তাকে আমি স্বাগত জানাবো। যিনি দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হবেন, তাকে ছেঁটে ফেলা ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে না।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণপূর্ত সচিব বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সাথে বর্জ্যও বেড়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের আবাসন প্রকল্পে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। হাউজিং প্রকল্পে শতভাগ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। সকল মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করলে সারাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। এ কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে এবং জনগণকে সচেতন হতে হবে। জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণে গণমাধ্যম ভূমিকা পালন করতে হব।’
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নায়লা আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেনের নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ মঈনুল ইসলাম, ইজরি সাউথ এশিয়া-এর বাংলাদেশ বিজনেস ম্যানেজার মোহাম্মদ এ হাদি এবং প্রাকটিকাল অ্যাকশন-এর আরবান অ্যান্ড এনার্জি প্রোগ্রামের স্ট্র্যাটেজিক লিড উত্তম কুমার সাহা।
নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী। সেমিনারে আরও বক্তব্য প্রদান করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি আ স ম আমিনুর রহমান, হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শামীম আখতার।
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৯:৫৯ ২০৯ বার পঠিত