পোশাক শ্রমিকদের দৌড় গড়ায় স্বাস্থ্য সেবার প্রদানের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ৯টি গার্মেন্টসে ‘স্যাটালাইট কর্ণার’ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কর্ণার থেকে পোশাক শ্রমিকরা পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, প্রসব সেবা ও মাসিককালীন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সেবা পেয়ে আসছে। ২০১৭ সনের জানুয়ারি থেকে নিয়মিতভাবে এই স্যাটেলাইট কর্ণার মাসে দু’বার আয়োজন করা হয়। প্রতিমাসে প্রায় ২ হাজার গার্মেন্টস কর্মীকে সেবা প্রদান করা হয়।
বুধবার ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ফতুল্লার কায়েমপুর এলাকায় ফকির নিটওয়্যারস লি: গার্মেন্টসে স্থাপিত ‘স্যাটেলাইট কর্ণার’ পরিদর্শন করেন উদ্যোক্তা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র রায় ও ফকির গার্মেন্টসের জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) সুলতান মাহমুদ হোসাইনী।
বিভিন্ন গার্মেন্টসে স্যাটেলাইট কর্ণার স্থাপন সম্পর্কে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ জানান, অবহেলিতভাবে পোশাক শ্রমিক ভাই বোনেরা সব সময় পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্যসহ সকল ধরণের স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হল স্বাস্থ্য সেবা। পোশাক শ্রমিক ভাই বোনদের সুবিধার্থে এবং ‘জনগণের দৌড় গোড়ায় সেবা প্রদান’-এই মহান ব্রতকে সামনে নিয়ে সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্তমানে ৯টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে স্যাটেলাইট কর্ণার (পরিবার পরিকল্পনা) চালু রয়েছে।
সদর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে সরাসরি শ্রমিকদের সুবিধার্থে স্যাটেলাইট কর্ণার পরিচালিত হয়। এখান থেকে শ্রমিক ভাই-বোনেরা পরিবার পরিকল্পনা বিভিন্ন পদ্ধতির সেবা গ্রহণের পাশাপাশি প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী নিয়মিত চেক আপের সেবা পেয়ে আসছেন। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের দক্ষ সেবাকর্মীগণ ও মাঝে মাঝে অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান করে থাকে এতে বিভিন্ন সেবা কেন্দ্রে রেফারের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া বিনামূল্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্যারসিটামল, মেট্রোনিডাজল, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ডক্লিসাইক্লিনসহ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ বিতরণ করা হয়। একটা বিষয় পরিস্কার যে গার্মেন্টেসে কর্মরতকর্মীরা অপুষ্টির শিকার। এ ওষুধ প্রদানের ফলে কর্মীরা অপুষ্টির ঘাটতি কিছুটা পূরণ হয়।
এ ধরণের ব্যতিক্রম উদ্যোগের ফলে গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে কর্মতৎপরতা ফিরে এসেছে এবং উৎপাদনক্ষমতা আগের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ও রপ্তানীর ক্ষেত্রে বিদেশী ক্রেতাদের অন্যতম শর্ত পূরণ হয়েছে। এতে মালিকগণও খুশি বরে জানান তিনি।
তিনি জানান, বর্তমানে ফকির নিটওয়্যারস লি:, নীট কনসার্ন লি:, নীট কনসার্ন লিঙ্গজেরী, গোমতী নিটওয়্যার, নীট কনসার্ন এ্যাপারেলস, টাইম সোয়েটার লি:, রেইনী ড্রেস লি:, নীট কানসার্ন প্রিন্ট ও মডেল ডি ক্যাপিটাল গার্মেন্টসে স্যাটেলাইট (পরিবার পরিকল্পনা) কর্ণার চালু রয়েছে।
তিনি বলেন, উক্ত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী রয়েছে। যার শতকরা ৮০ ভাগ নারী কর্মী। ফলে একই স্থানে বসে প্রতিমাসে প্রায় ২ হাজার গার্মেন্টস কর্মীকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় এবং একই সাথে বিনামূল্যে ডেলিভারীর জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। এ ছাড়ারও এই স্যাটেলাইট কর্ণারে মাসিককালীন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনতার জন্য গার্মেন্টস কর্মীদের সাথে স্যানিটারী ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়। গার্মেন্টস কর্মীদের নিয়ে বাল্য বিবাহের কুফল, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, অপুষ্টি, প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে অবহিত কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
গার্মেন্টস এ কর্মরত উচ্চ পর্যায়ের অফিসারগণকে নিয়ে অবহিত কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে এবং নার্স, মিডওয়াইফ ও ফার্মাসিস্টদেরকে পরিবার পরিকল্পনার অস্থায়ী পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ ধরণের উদ্যোগ ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকলে গার্মেন্টস শ্রমিক ভাইবোনদের স্বাস্থ্য সেবার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১২:১৭ ৬০৯ বার পঠিত