
বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, মিয়ানমার বন্ধু রাষ্ট্র হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো পক্ষপাত নেই বেইজিংয়ের। এই সংকট নিরসনে গত দুই বছর ধরে উভয় দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে চীন। অনেকেই মনে করেন, মিয়ানমারে চীনের বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে। এটি ঠিক নয়। আমরা সব প্রতিবেশীর স্বার্থ রক্ষা করি। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া হবে।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ খোঁজা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ইংরেজি দৈনিক ‘বাংলাদেশ পোস্ট’ এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে চীন আগ্রহী। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত তিন দেশের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো- তিন দেশের রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সম্মতি যে, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ডিজি-মিয়ানমার উইং) ও চীনের রাষ্ট্রদূত গত দুই মাস ধরে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে আসছেন। খোলামেলা ও বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে কিছু অভিন্ন ইস্যু বেরিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে টেকসই সমাধানে চীন অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে জানিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি একটি বাক্যে এভাবে বলা যায় যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন উদ্বেগ প্রকাশ করে, চীন অবদান রাখে এবং চীন কাজ করে।
চীনের উদ্বেগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি চীন ভাগাভাগি করে নিয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে কীভাবে মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন করানো যায় এবং তা যেন টেকসই হয় সে ব্যাপারে চীন যথেষ্ট আন্তরিক।
সেমিনারে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর’র স্থানীয় প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শতকরা ৯৭ জনই স্বদেশে ফিরে যেতে চান। আর তাদের এ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন। পাশাপাশি রাখাইনে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা আর বাংলাদেশে ফিরে না আসে।
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আমরা চাই রোহিঙ্গারা সম্মানের সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যাক। গত দুই বছর ধরে এ কথা বললেও দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো একজন রোহিঙ্গাও স্বদেশে ফিরে যেতে পারেননি। তিনি বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের উচিত, দ্রুত মিয়ানমারে একটি অনুসন্ধানী দল পাঠানো। যারা সেখানকার রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঠিক চিত্র তুলে ধরবেন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ পোস্টের প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাই কমিশনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সাবিনা ইয়াসমিন সিদ্দিক প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৮:০৯ ১৯৯ বার পঠিত