নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের বিভিন্ন খাতের আয়ের ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান সহকারী রেজাউল করিম। এ বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা পরিষদকে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ অধিশাখা। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুব্রত পাল।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের জমি লিজ, ঘাট ইজারা, ডাকবাংলোর ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতের মোট ৭৮ লাখ ৪ হাজার ১৩০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন রেজাউল করিম। এদিকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্মারকের প্রেক্ষিতে গত ১৮ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ড. জুলিয়া মঈনের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হোসেন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে রেজাউল করিমের আত্মসাৎকৃত টাকা আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়। একই সাথে দুর্নীতিগ্রস্থ এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকুরি বিধিমালা, ১৯৯০ অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে জেলা পরিষদের একাধিক সূত্র জানায়, ১৭ বছরের সরকারি চাকরি জীবনের পুরো সময়ই নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদে ছিলেন রেজাউল করিম। দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ঢোকা এই কর্মচারী তার দুর্নীতি চালিয়ে গেছেন পুরো চাকরি জীবনে। কিন্তু একটি প্রভাবশালী চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতা থাকায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলার সাহস করতো না। কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে নিলে সে নানাভাবে ওই ব্যক্তিকে হুমকি দিতো। যার ফলে জেলা পরিষদের বিভিন্ন খাতের ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেও ধরাছোয়ার বাইরে ছিলেন তিনি। সামান্য একজন কর্মচারী হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরাট অঙ্কের এই টাকা আত্মসাৎ করলেও জেলা পরিষদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে কী করে বিষয়টি আসেনি এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
কেবল টাকা আত্মসাতই নয় রেজাউল করিম চাকরিতে প্রবেশ করেছিলেন প্রতারণার মাধ্যমে। জাল সার্টিফিকেটে মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। জাল সার্টিফিকেটে চাকরিতে ঢুকে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় কারাগারেও গিয়েছেন তিনি। ওই অভিযোগে চাকরি থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।
অভিযুক্ত এই রেজাউল করিম চাকরিতে আবেদন ও যোগদানের যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও এবং স্নাতক পাশ না হয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে জেনে বুঝে মিথ্যাভাবে চাকরিতে যোগদানের পর প্রতারণা ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি ২১ লাখ ২০ হাজার ৯৮০ টাকা বেতনভাতা গ্রহণ করে আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় কারাগারেও গিয়েছেন তিনি। ওই অভিযোগে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।
জানা গেছে, ২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদে উচ্চমান সহকারী পদে যোগদান করেন চাঁদপুর জেলার মতলব থানার চরলক্ষীপুর গ্রামের আবু বকর সিদ্দীকের ছেলে রেজাউল করিম। যোগদানের ২৪ দিনের মাথায় ২৪ অক্টোবর বদলি হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদে যোগদান করেন। চাকরির ১৭ বছর পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে রেজাউল করিমের সার্টিফিকেট জমা না দিয়ে চাকরি নেয়ার বিষয়টি।
এ ঘটনায় বর্তমান কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-২ এর উপ সহকারী পরিচালক ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন। রেজাউল করিম গত বছরের ৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে গেলে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও কৃঞ্চ দেবনাথের বেঞ্চ তাকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়ে মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করার নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে জামিনের আবেদন করলে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. শওকত আলী চৌধুরী তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। দুর্নীতির পথ অবলম্বন করে সরকারি চাকরিতে ঢোকা এই কর্মচারী তার দুর্নীতি চালিয়ে গেছেন পুরো চাকরি জীবনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৬:৩১ ২৩৪ বার পঠিত