
ফরিদপুরের মধুখালীতে আদর্শ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহনাজ পারভিন লিপির আংটি, মোবাইল ও নগদ টাকা নিয়ে লাশ ফেলে যায় আখখেতে।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ইয়ামিন নামের এক কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইয়ামিনের দেয়া তথ্যানুসারে এ সব জানিয়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম।
মধুখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, শাহনাজ পারভিন লিপি তার এনজিও কার্যালয়ে কাজ শেষে প্রতি রাতেই সৌখিন নামের এক ভ্যানচালকের ভ্যানে বাড়ি ফিরতেন। প্রতিদিনই সমিতির মোটা অংকের টাকা সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন লিপি। এই টাকার প্রতি নজর পড়ে ভ্যানচালক সৌখিনের।
সৌখিন ও তার বন্ধুরা লিপিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে লিপি অফিস থেকে সৌখিনের ভ্যানে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌখিনের বন্ধু হাসান ও ইয়ামিন পথরোধ করে ভ্যানে ওঠে।
কিছুদূর যাওয়ার পর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভ্যানের নিচে লুকিয়ে রাখা কাঠের লাঠি দিয়ে লিপির মাথায় আঘাত করে সৌখিন। আঘাতে লিপি ভ্যান থেকে নিচে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে হাসান লিপির শরীরে উপর্যুপরি আঘাত করে। লিপির দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়লে সৌখিন, হাসান ও ইয়ামিন টেনে পাশের একটি আখখেতে নিয়ে যায়।
লিপির মৃত্যু নিশ্চিত করে তার হাতের আঙুলে থাকা কয়েকটি আংটি খুলে নেয় ওই ৩ জন। এ ছাড়া দুটি মোবাইল ফোন ও ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা নগদ টাকা নিয়ে লাশটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সবাই।
সাইফুল আরও জানান, সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার বৈকুন্ঠপুর এলাকার এক ওয়াজ মাহফিল থেকে ইয়ামিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ইয়ামিনের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে ইয়ামিনের দেয়া তথ্যানুসারে বাগাট দক্ষিণপাড়ায় হাসানের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানকালে হাসানকে পাওয়া যায়নি। তার বাড়ি তল্লাশি করে নগদ ১২ হাজার টাকা ও নিহত লিপির আংটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় হাসানের একটি প্যান্টও উদ্ধার করা হয়। ওই প্যান্টে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের সময় ওই প্যান্টটি পরে ছিল হাসান।
সাইফুল জানান, ইয়ামিনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়েছে। হাসান ও সৌখিনকে আটক করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট বাজারে অবস্থিত আদর্শ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনাজ পারভিন লিপি তার এনজিও কার্যালয়ে কাজ শেষে ভ্যানযোগে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন।
পরদিন ৩ জানুয়ারি সকালে উপজেলার বাগাট ঠাকুরপাড়ার একটি আখখেত থেকে পারভিনের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।
শাহনাজ পারভিন লিপি বাগাট মুন্সিপাড়ার মির্জা শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। এ ঘটনায় নিহত পারভিনের ভাই মো. অহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ঘাতকদের গ্রেফতারে মাঠে নামে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ২১:২১:২৯ ৩১২ বার পঠিত