
ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্যের অফিসে দুই যুবককে ধরে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে কুতুবপুরের শাহীমহল্লা মুসলিমপাড়া এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে, নির্যাতনের ঘটনার মূল হোতা এই মামলার প্রধান আসামী আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন হাওলাদার এখনও রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে স্থানীয় থানা পুলিশ প্রশাসন।
গ্রেফতারা হলেন- কুতুবপুর শাহী মহল্লা এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে রবিন এবং একই এলাকার শফিকুর রহমানের চেলে ইউনুছ। তারা দুজনই আলাউদ্দিন হাওলাদারের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য বলে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৩১ ডিসেম্বর কুতুবপুরে আলাউদ্দিন হাওলাদারের অফিসে নাঈম ও রাতুল নামে দুই যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতিত নাঈমের মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে ১০ জানুয়ারি একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপর ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে রবিন ও ইউনুছকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, নির্যাতনের ঘটনার মূল হোতা কুতুবপুর দুই নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদারকে মামলার প্রধান আসামী করা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। বরং এই আওয়ামীলীগ নেতাকে এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘুরতে দেখেছেন অনেকে। তাই স্থানীয়দের অভিযোগ তিনি আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ার সুবাদে পুলিশ তাকে ছাড় দিচ্ছেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি আসলাম হোসেন বলেন, কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি সেটা বড় কথা নয়। আমরা দেখব অপরাধী। তদন্তে অপরাধী প্রমাণিত হলে তাকে গ্রেফতার করবো। তবে আলাউদ্দিন হাওলাদারকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সুতরাং তাকে আমরা খুঁজছি আর সে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এ কথাটা সঠিক নয়। সঠিক হলে অবশ্যই আমরা তাকে গ্রেফতার করাতাম।
এর আগে ২০১৯ সালের গত ১২ ডিসেম্বর ফতুল্লার শাহী মহল্লা এলাকা থেকে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বিদেশী জাতের ছাগল চুরি হয়। এ ঘটনায় ৩১ ডিসেম্বর মুসলিমপাড়া এলাকার রাতুল ও নাঈম নামে দুই যুবককে ধরে আনা হয় কুতুবপুর দুই নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদারের অফিসে। সেখানে এই আওয়ামীলীগ নেতার নির্দেশে তারই সামনে ওই দুই যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়।
এই নির্যাতনের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ৯ জানুয়ারি কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিলে মূহুর্তের মধ্যে তাই ভাইরাল হয়। শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়। সর্বত্র ধিক্কার ও ঘৃণা ছুড়তে থাকে মানুষ। আলাউদ্দিন হাওলাদারকে গ্রেফতারের জোর দাবি উঠে। ওই রাতেই বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়।
ওই ঘটনায় ১০ জানুয়ারি নির্যাতিত যুবক নাঈমের মা নাজমা বেগম ফতুল্লা মডেল থানায় বাদি হয়ে আলাউদ্দিন হাওলাদারসহ ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় আওয়ামীলীগ সেতা আলাউদ্দিন হাওলাদারকে। তবে এ মামলায় দুইজন গ্রেফতার হলেও এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন নাটের গুরু আলাউদ্দিন হাওলাদার।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১২:৪৯ ২২২ বার পঠিত